তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড় প্রতিনিধি : তেঁতুলিয়ায় মেহ সাগর ও নেপালী জাতের কলা চাষাবাদ করে বাম্পার ফলন পেয়ে চাষী লতিফের পরিবারের মুখে হাসি। তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের আবদুল লতিফ। পেশায় একজন ক্ষুদ্র চাষী। নিজের তেমন জমাজমি নাই। অন্যের জমাজমি বর্গা চাষাবাদ করে বৃদ্ধা মা, অর্নাসে পড়–য়া ছোট ভাই, এক ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে পরিবারের ভোরণ পোষণ চালান। গত শনিবার দুপুরে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ি-ভিটা সংলগ্ন ৫৫ শতক ডাঙ্গা জমিতে কলা চাষাবাদ করেছেন। লতিফের সঙ্গে আলাপ চারিতায় জানা যায়, ১৪১৯ বাংলা সালের শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে দিনাজপুর পাঠিয়া ডাঙ্গী থেকে প্রথম অবস্থায় ৩শত কলার চারা এনে ২০শতক জমিতে কলা চাষাবাদ করেন। ওই বছর ২০শতক জমির কলার ফলন ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেন। ২০শতক জমির কলা চাষাবাদে তার মোট খরচাদি ২০ হাজার টাকা বাদ দিয়ে প্রথম বছরই ৫০ হাজার টাকা লাভ করেন। পরের বছর আবদুল লতিফ পাশ্ববর্তী আর ৩৫ শতক জমিতে নিজ বাগানের উৎপাদিত কলার চারা রোপণ করেন। ২০১৪ সালে তিনি ৫৫ শতক জমির উৎপাদিত কলা পাইকারি দরে দেড় লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করেন। এবছরও চাষাবাদের খরচাদি বাদ দিয়ে এক লাখ টাকা লাভ করেন। একই জমিতে ২০১৫ সালে ৬শতাধিক কলার গাছে বাম্পার ফলন ধরেছে। তার কলাবাগান কেনার জন্য স্থানীয় কলা ব্যবসায়ী ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসলেও বাজার দরের তুলনায় দাম কম ধরায় তিনি নিজেই ক্ষেত থেকে কলা কাটে ও পাকিয়ে সিপাইপাড়া, তিরনইহাট, রণচন্ডিহাট, শালবাহান হাট ও চৌরাস্তা বাজারে বিক্রি শুরু করেন। এবছর তিনি ক্ষেতের উৎপাদিত কলা দেড় লক্ষাধিক টাকা বিক্রির আশা করছেন। লতিফ বলেন, বাজারে অনেক ব্যবসায়ী বিষাক্ত কীটনাশক দিয়ে কলা পাকিয়ে বাজারজাত করলেও তিনি সেই ধরনের কলা চাষাবাদ ও বাজারজাত করতে রাজি নন। তার কথা নিজে যা খাবো অন্যকেও তাই খাওয়াবো। আব্দুল লতিফ জানান কলা চাষাবাদে তেমন কোনো রোগ বালাই বা পরিশ্রম নেই। চারা রোপনের পর বছরে ৪ বার সার-কীটনাশক দেয়ার পাশাপাশি খরা মৌসূমে কমপক্ষে দুইবার সেঁচ দিতে পারলেই আর কিছু লাগে না। তবে চাষী লতিফের অভিযোগ উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রে তার কলা বাগান হলেও কৃষি অফিসের কোনো লোকবল কোনো দিন তার বাগান দেখার জন্য আসেনি। কোনো রোগ বালাই দেখা দিলে তিনি বাজারে কীটনাশক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করতেন। উপজেলা কৃষি অফিসার, কৃষিবিদ মো. জাহাংগীর আলম জানান- উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে কলা চাষাবাদ হচ্ছে। সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে পারায় এ অঞ্চলের কলা চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে। তা ছাড়া তেঁতুলিয়ায় প্রচুর পরিমাণে কলার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু উপজেলায় স্বল্প পরিসরে চাষ হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দিনাজপুর, দশমাইল, বগুড়া ও বালিয়াডাঙ্গী এবং ঠাকুরগাঁও এলাকা থেকে পাইকারি দামে কলা কিনে তেঁতুলিয়ার হাট-বাজারে বিক্রি করছে।