তেঁতুলিয়া পঞ্চগড় থেকে এস.কে.দোয়েল: পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় হেমন্তের পাকা ধান এখন প্রত্যেক চাষীর ঘরে। ধান কাটা শেষও প্রায়। ঘরে উঠেছে হেমন্ত ঋতুর এবার বাম্পার ফলনের সোনালী আমন ধান। আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে নেই ধানের উপযুক্ত দাম। তাই ধানের উপযুক্ত দাম না পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসির স্থলে মলিন রেখা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার হেক্টর জমি। কিন্তু উক্ত লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৮শত ৩০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার বেঁলে দোঁআশ মাটিতে বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন হয়েছে। তবে গুটিস্বর্ণ জাতের ধান একরে ৪০ থেকে ৫০ মণ, উচ্চ ফলনশীল বিনা-৭, ব্রি ধান ৩৩, ব্রি ধান ৪৯, ব্রি ধান ৬২, ব্রি ধান ৩৪ জাতের ধান একরে ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। এছাড়া হাইব্রিড জাতের সোনার বাংলা-৬, লাল তীর, নাফকো একরে ৫০ থেকে ৬০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। অপরদিকে দেশি স্বর্ণ, বলাকা, এগারো, পাইজাম, কাইশাবিনি ইত্যাদি জাতের ধান একরে ৩৫ থেকে ৪০ মণ পর্যন্ত ফলন হয়েছে। আর ফলন কম হওয়ায় দেশি জাতের ধান উৎপাদনে চাষীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। বাজারে বর্তমানে শুকনা ধান ৫২০ টাকা ও হালকা ভেজা ধান ৪৮০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রতি মণ ধান উৎপাদনে চাষীদের প্রায় ৬০০ টাকা খরচ হচ্ছে। চাষীদের এ হিসাব অনুযায়ী আমন ধান লাগানো থেকে কাটা মাড়াই পর্যন্ত একরে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
রবিবার দুপুরে দর্জিপাড়া, কানকাটা, শারিয়াল জোত, সাহেবজোত গ্রামের ধান কাটার সময় ক্ষেতে কথা হয় বেশ কয়েকজন চাষীর সাথে। তারা জানান তিন বেলা খাওয়ানোর পরও একজন শ্রমিককে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০টাকা মজুরি দিয়েও ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য চাহিদা অনুযায়ী লোক পাচ্ছি না। কারণ উপজেলার বেশির ভাগ শ্রমিক পাথর তোলার সাথে সম্পৃক্ত। এসব শ্রমিকরা কাজীবাড়ির বড়বিল্লা, মহানন্দা নদীতে দিনের কয়েক ঘন্টা পাথর উত্তোলণ করেই ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন। এসব কারণে এলাকার শ্রমিকরা কোন কৃষকের বাড়িতে কাজ না করে বাড়তি টাকা উপার্জনের জন্য পাথর তোলেন। ফলে স্থানীয় কৃষকরা পাকা ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য শ্রমিক না পেয়ে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অপরদিকে ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, পীরগঞ্জ, পীরগাছা, কুড়িগ্রাম, লালমনির হাট, নীলফামারী, জলঢাকা, ডোমার, ঠাকুরগাঁও, হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গি এলাকার শ্রমিকরা ৮ থেকে ১০ জনের দল বেঁধে তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এসে চুক্তিভিত্তিক আম ধান কাটার কাজ করছে। কিন্তু এসব শ্রমিকদের দিয়ে চাষীদের ধান কাটা মাড়াইয়ের জন্য খাওয়া খরচাদি দিতে বাড়তি অর্থ গুণতে হচ্ছে। ফলে আমন ধানের বাম্পার ফলন পেয়েও চাষীদের মুখে হাসি নেই। ফলত দর্জিপাড়ার আমির আলী, সাহেবজোত গ্রামের চাষী নশিদুল, রাইজুল, মমিন ও মাগুড়া গ্রামের চাষী আব্দুল লতিফসহ অনেক চাষীর অভিযোগ বাজারে নিত্যপণ্যের দামসহ অন্যান্য জিনিসের দামের তুলনায় বাজারে ধানের দাম কম। বাজারে একমণ আমন ধান বিক্রি করে ৪০০ টাকায় ১ কেজি গরুর গোশ্তর বা ৫০০ টাকায় ১কেজি খাসির গোশতসহ অন্যান্য খরচাদি করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব মিলে চাষীদের ধান লাগানো থেকে শুরু করে কাটা মাড়াই পর্যন্ত লোকসানই গুণতে হচ্ছে। সাধারণ চাষীরা সরকারি ভাবে প্রতিমণ আমন ধান কমপক্ষে ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা বিক্রি মূল্য নির্ধারণের জন্য কৃষিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।