আইসোলেশন ইউনিট খোলার নির্দেশ সকল সরকারি হাসপাতালে চীন থেকে ফিরতে ইচ্ছুকদের দেশে আনতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। চীনে উৎপত্তি হওয়া এই ভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বের ১২টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার পর্যন্ত চীনে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সর্বশেষ বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক নারীকে সনাক্ত করা হয়েছে। ভাইরাস আক্রান্ত ওই নারী চীনা নাগরিক। বর্তমানে তিনি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারি হাসপাতালে অনতিবিলম্বে আইসোলেশন ইউনিট খোলা নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশের আটটি বিভাগের সকল জেলা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে এ নির্দেশনা দেন। একইসঙ্গে দেশের সকল স্থল ও নৌবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষাসহ সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল জানান, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীপাওয়া না গেলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন দিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
এর আগে গত রোববার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জেলা সদর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দেশের ২৪টি স্থল ও নৌবন্দরে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় এবং তা চিঠি দিয়ে বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের জানিয়ে দেয়া হয়।
অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন স্থলবন্দরে আপাতত বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের হেলথ কার্ডের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ ও থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে মনিটরিং করা হবে।
এদিকে, চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্যে যাঁরা দেশে ফিরতে ইচ্ছুক, তাঁদের ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরই এ ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান। শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে এ নিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, বাংলাদেশের নাগরিক যাঁরা চীন থেকে ফিরতে চাইবেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীন সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কী প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে, তা বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতির ভিত্তিতে করা হবে।
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই বিষয়ে আজকের দিনের শেষে একটি প্রাথমিক নির্দেশনা জারি করা হবে, যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে আগ্রহীদের তালিকা প্রণয়ন।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর। সেখানে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়েছেন পড়েছেন। দেশে ফেরার আকুতিও জানিয়েছেন কেউ কেউ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে চীনে ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে করোনাভাইরাসে আগের থেকে আরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এই ভাইরাসের বিস্তার আরও বাড়তে পারে। চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ভিয়েতনামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে। চীনের বাইরে সারা বিশ্বে ২ হাজারের বেশি মানুষ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে।
চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বলছে, এই ভাইরাস সম্পর্কে এখনো বেশি কিছু জানা যায়নি। এর ইনকিউবেশন পর্যায় ১ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে। এই সময় ভাইরাসটির সংক্রমণ হয়ে থাকে। কিন্তু সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) এমনটা নয়।