বিদেশে যেন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় : প্রবাসীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
5, February, 2020, 11:43:6:AM
স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : বিদেশে যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, প্রবাসীদের সেভাবে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনাদের আচার-আচরণ, ব্যবহার সব কিছুতে যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। প্রত্যেক উপজেলা থেকে আরও ১ হাজার করে লোক প্রবাসে পাঠাতে সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
ইতালি সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোমের পার্কো দে প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানির প্রসঙ্গ সম্পর্কে বলতে গিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমি জানি যে, প্রবাসী কেউ যদি দেশে যায় বিমানবন্দরে মাঝে মধ্যে খুব হয়রানির শিকার হতে হয়। আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শুনে বাইরে থেকে আসবে তখন ভাবে একটু চাপ দিলে বোধহয় ডলার পাওয়া যাবে।
ঘুষ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন ঘুষ যে দেয় সেও যেমন অপরাধী আর যে নেয় সেও অপরাধী। যে নেয় শুধু সে অপরাধী নয়, যারা দেয় তারাও অপরাধী।’
ডিজিটাল পাসপোর্টের পর এখন ই-পাসপোর্ট চালুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন ই-পাসপোর্টের যুগ। আমরা ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি। যাতে কেউ আর ধোঁকায় না পড়ে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন প্রত্যেকটা জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছি। কোথাও কোনো অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ধরা পড়ে। ধরা পড়া শুধু না, তথ্য সরাসরি আমার কাছে চলে আসে।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের ‘যে কোনো জাতির সঙ্গে’ প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে। এ দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়।
বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে বিদেশিদের নেতিবাচক মনোভাবের ছিল তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটা অবস্থা ছিল এক সময়, বাংলাদেশ শুনলে আগেই বলত ওহৃ বাংলাদেশ ওখানে তো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মানুষ খেতে পায় না, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। বাংলাদেশটাকে একটা হেয়`র চোখে দেখতো। যেটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ছিল। যেটা আমাদের জন্য কষ্টের ছিল।
আর এক সময়ের ‘দাতা দেশগুলোও’ এখন বাংলাদেশকে আর ‘ভিক্ষা দিতে’ না এসে বরং ‘উন্নয়ন সহযোগী’ মনে করে সহযোগিতা করতে আসে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, কারো কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজেরা পারি সেটা প্রমাণ করেছি।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চেয়েছিল আমাদেরকে বদনাম দিতে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারপর বলেছিলাম ওটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করব। আজকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা আজকে সেখানে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিরোধী দলে থাকতেই তার প্রতিজ্ঞা ছিল, কোনোদিন সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করবেন।
তিনি বলেন, এমনভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব... যে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে, সেই বাংলাদেশ শুনলে যেন মানুষ বলে... নাহ বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে মুজিববর্ষে এসে এইটুকু দাবি করতে পারি, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে সেই জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছি।
প্রবাসীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে চলবে। সেই মাথা উঁচু করে চলবার মতনই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনাদেরকেও সেভাবে আপনাদের আচার-আচরণ ব্যবহার- সবকিছুতে সেটা বজায় রাখতে হবে। যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
আর দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, আমার কিন্তু বয়স হয়ে গেছে। আমার কিন্তু ৭৩ বছর বয়স, এটা মাথায় রাখতে হবে। কাজেই আগে যখন অল্প বয়স ছিল অনেক ঘুরেছি। এখন আর এত সম্ভব না। তারপরও কাজ অনেক বাকি রয়ে গেছে। কাজেই যতটুকু সময় পাই, ততটুকু সময় দেশের কাজ করার চেষ্টা করি। যত দ্রুত এই দেশটাকে উন্নত করতে চাই। সেজন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, ইতালী আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইদ্রিস ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।