স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট: কচুরিপানা খাওয়ার জন্য পরামর্শ দেননি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বরং তিনি গবেষকদের বলেছেন- কিভাবে কচুরিপানা খাবার উপযোগী করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা করার জন্য। গতকাল পরিসংখ্যান বিভাগের গবেষণা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী অন্যান্য অনেক বিষয়ের পাশাপাশি কচুরিপানার প্রসঙ্গ টেনে গবেষকদের এ পরামর্শ দেন। এ সময় অডিয়েন্স থেকে ‘গরু কচুরিপানা খায়’ বলে একজন আওয়াজ করলে মন্ত্রী হাস্যরসের সঙ্গে বলেন- ‘গরু কচুরিপানা খেতে পারলে আমরা পারবো না কেন’। এ বিষয়ে আপনারা গবেষণা করবেন। গবেষকদের মাথা থেকে নতুন নতুন উদ্ভাবন বেরিয়ে আসে।
মন্ত্রী তার পুরো বক্তব্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। কাঠালের বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনের কথা বলেছেন। পোস্ট হারভেস্ট লস কমানো নিয়ে গবেষণা করতে বলেছেন। এক পর্যায়ে কচুরিপানার প্রসেঙ্গ তিনি গবেষকদের খাবার উপযোগী করা যায় কি না সে ব্যাপারে গবেষণা করতে বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের ডাইরেক্টর (ডেপুটি সেক্রেটারী) বানসুরি এম ইউসুফ লিখেছেন- “উন্নত বিশ্বে, বিশেষকরে জাপানে আপনি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ভাতের প্যাকেট কিনলে অনেকক্ষেত্রে ভাতের দলার উপর একটি সবুজ প্রলেপ দেখতে পাবেন। এই প্রলেপসহ ভাত খেতে হয়।
আরও অনেক রান্নাকরা শুকনা খাবার এই সবুজ প্রলেপে মোড়ানো থাকে।
এই প্রলেপ কি? এটি সিম্পলি সামুদ্রিক কচুরিপানার পেস্ট দিয়ে তৈরী আস্তরণ।
সামুদ্রিক মাছ এবং উদ্ভিদে বিদ্যমান প্রচুর পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (পুফা)কে মানুষের শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ‘এসেনশিয়াল ফ্যাটি’ এসিড বলা হয়।
এই এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিডের জন্যই কচুরিপানার একটা অংশকে খাবার উপযোগী করে তা দিয়ে বিভিন্ন খাবারের আস্তরণ দেয়া হয়।
সো, কচুরিপানা শুধু গরু না, মানুষও খায়। এ নিয়ে ট্রল করার কিছু নেই।”
এ ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। আব্দুর রহিম নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারী মন্তব্য করেছেন- কচুরিপানা যে কোন পরিবেশেই জন্মাতে পারে, এমনকি বিষাক্ত পানিতেও এরা জন্মায়। কচুরিপানা অতিমাত্রার দূষণ ও বিষাক্ততা সহ্য করতে পারে। মার্কারী ও লেডের মত বিষাক্ত পদার্থ এরা শিকড়ের মাধ্যমে পানি থেকে শুষে নেয়। তাই পানির বিষাক্ততা ও দূষণ কমাতে কচুরিপানার চাষ অত্যন্ত উপকারী। পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে কচুরিপানা মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ভেষজ চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর আমাদের দেশে কৃষি জমিতে কচুরিপানা সার হিসেবে ব্যবহূত হয়। তাই কচুরিপানাই হয়তো আগামী প্রজন্মের কাছে অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে। তারেক রহমান নামে অপর একজন লিখেছেন- কচুরিপানাকে আমরা এক বহিরাগত জলজ আগাছা বলেই জানতাম। এ দেশের জল থেকে কচুরিপানা নির্মূলের চেষ্টাও কম হয়নি। কিন্তু সময় ও অর্থের অপচয় ছাড়া তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা বাদ দিয়ে শুরু হয়েছে নতুন চেষ্টা। কীভাবে একে আপন করে নিয়ে নিজেদের কাজে লাগানো যায় তারই চেষ্টা। তখনই জানা গেছে, যাকে আমরা এতদিন ক্ষতিকর আগাছা বলে ভাবছিলাম তার মধ্যেই রয়েছে অসাধারণ সব গুণ। সত্যি কথা বলতে কি, এই সব গুণের দৌলতে কচুরিপানাই হয়তো আগামী দিনে হয়ে উঠবে আমাদের অমূল্য সম্পদ।
উল্লেখ্য, একসময়ে মাশরুমকে ব্যাঙের ছাতা হিসেবে চিহ্নিত করে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যরুপে দেখা হতো। কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এর উপকারিতা প্রমাণিত হওয়ায় আজ ব্যাপক সমাদৃত। তদ্রুপ, আজকের সহজলভ্য কচুরিপানা নিয়ে গবেষণা খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার দুয়ার।