গবেষণা করলেই চলবে না, ফলাফল জানতে চাই : প্রধানমন্ত্রী
5, March, 2020, 12:08:18:PM
স্টাফ রিপোর্টার : গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হবে কীভাবে তা নিশ্চিত করতে গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গবেষণাটা সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে শুধু গবেষণা করলেই চলবে না, গবেষণার ফলাফল কী সেটাও জানতে চাই। সেটা যে দেশের জন্য কাজে লাগছে তা নিশ্চিত হতে হবে।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু গবেষণা করলেই হবে না। কার গবেষণা কী কাজে লাগছে সেটা দেখতে হবে। এজন্য একটা ডেটাবেজ হওয়া দরকার। এই গবেষণার ফলে কাকে কোন কাজে লাগানো যাবে এ বিষয়গুলো আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আমরা যখন হাইব্রিড ধানের উৎপাদন শুরু করি তখন অনেকেই বাধা দিয়েছেন। কিন্তু আমি তা শুনিনি। কারণ আমাদের জমি কম, মানুষ বেশি। গবেষণা করে কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে দিকে আমরা নজর দিয়েছি। এছাড়া তরিতরকারি ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্য গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে আজ উৎপাদন হচ্ছে। খাদ্য ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গবেষণা খুবই প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। সর্বক্ষেত্রে গবেষণা হচ্ছে বলেই বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে আর কারো কাছে ধরণা দিতে হবে না। আর কারেও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। আমরা এই দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কে কী গবেষণা করছেন তার ফলাফল আমরা জানতে চাই। সংশ্লিষ্টদের কাজে লাগিয়ে আমরা দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।
এসএসসি পর্যন্ত শিক্ষায় কোনও ভাগ থাকা উচিত নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আইয়ুব খানের সময় ক্লাস নাইন থেকেই বিজ্ঞান, মানবিক প্রভৃতি বিষয় আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এসএসসি পর্যন্ত সবার এক শিক্ষা থাকা ভালো, কোনও ভাগ থাকবে না, কিছু মৌলিক বিষয়ে সবার শিক্ষা থাকা ভালো, এরপর বিশেষায়িত শিক্ষার জন্য বিভাগ আলাদা হওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে আরও সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। বাবা-মার কথা শুনতে হবে। পড়ালেখা করতে হবে। খেলাধুলাও করতে হবে। নিজের দেশকে ভালোবাসতে হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনে যেন সুন্দর একটা জীবন পায়, কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, শহর-গ্রাম সবখানেই যেন উন্নয়ন হয়। উন্নয়নের সব পরিকল্পনা গ্রামকে ঘিরেই করে যাচ্ছি। পুরো দেশটা যেন সমানভাবে উন্নত হয় সেসব ভেবেই কাজ করছি।
দেশ স্বাধীনের পরেই বঙ্গবন্ধু আধুনিক শিক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ রোগে মারা গেলে আগে আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিতো, হায়াত নাই তাই বাঁচলো না বলা হতো। এই পরিস্থিতির উন্নয়নে ড. কুদরত-ই-খুদাকে দিয়ে, একজন বিজ্ঞানীকে দিয়ে, শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন বঙ্গবন্ধু। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি বঙ্গবন্ধু যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তা এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার যাত্রা শুরু করতেও পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি সেসময়েই।
প্রধানমন্ত্রী জানান, এবারের অর্থবছরে ৩ হাজার ২০০ জনকে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও আমরা ‘প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করেছি। সেখান থেকেও উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য অর্থ দিয়ে থাকি। শিক্ষার জন্য সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন।