অর্থনৈতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের প্রভাবে একের পর এক পতন ঘটছে বিশ্ব পুঁজিবাজারে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট কাঁপিয়ে সেই কম্পন লেগেছে উপমহাদেশেও। ভারত গত ১০ বছরের সর্বোচ্চ পতন দেখেছে গতকাল। পাকিস্তান বিরাট পতন ঠেকাতে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশে গতকাল সাম্প্রতিক কালের সর্বোচ্চ পতন ঘটেছে মূল্যসূচকের। জাপান, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশে বড় পতন ঘটছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে দাম পড়ে যায় প্রায় সাত শতাংশ। এই বিরাট ধসের পর সেখানে শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
এশিয়া এবং ইউরোপের শেয়ারবাজারেও দেখা গেছে একই পরিস্থিতি। কেউ কেউ শেয়ারবাজারে যা ঘটছে তাকে ‘রক্তগঙ্গা’ বয়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। ২০০৯ সালে বিশ্বজুড়ে যে আর্থিক সংকট দেখা গিয়েছিল, তারপর এ রকম বিপর্যয় আর শেয়ারবাজারে দেখা যায়নি বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় ধসের পর ওয়াল স্ট্রিটের শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা হয় কিছুক্ষণের জন্য। অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার সব বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জে সারাদিন ধরে একের পর এক ধস নেমেছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার : গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম মিনিটেই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ২৩ পয়েন্ট কমে যায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর এই সূচকটি ২৭৯ পয়েন্ট বা ৬.৫১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪০০৮ পয়েন্টে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে ডিএসইএক্স সূচকটি চালুর পর গতকালই সর্বোচ্চ পতন হয়েছে। এটি এখন নেমে গেছে ভিত্তি পয়েন্টের নিচে। ওই সময় ডিএসইএক্স সূচকের ভিত্তি পয়েন্ট ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। আর ডিএস৩০ ছিল এক হাজার ৪৬০ পয়েন্ট।
গতকাল ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৭০ পয়েন্ট, ডিএসই-৩০ সূচক ৮৯ পয়েন্ট এবং সিডিএসইটি সূচক ৫১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯২৯, ১৩৪৬ ও ৭৯৬ পয়েন্টে।
ডিএসইতে গতকাল ৩৫৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২টির বা ০.৫৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৫২টির বা ৯৯.১৫ শতাংশের এবং ১টি বা ০.২৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৭৬৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩২৯ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৫৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪টির, কমেছে ২৪৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪টির দর।
ভারতের পুঁজিবাজার : এক ধাক্কায় ২৩০০ পয়েন্ট নেমে গেল সেনসেক্স। আনন্দবাজার জানিয়েছে, একদিকে করোনা, অন্যদিকে ইয়েস ব্যাংক কেলেঙ্কারি- সব মিলিয়ে কয়েক দিন ধরে টালামাটাল অবস্থায় ভারতের পুঁজিবাজার।
সোমবার সকাল থেকে ভারতের বাজার আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। দিনের শুরুতেই এক ধাক্কায় ১৫০০ পয়েন্ট নেমে যায় সেনসেক্স। তারপর থেকে পতন অব্যাহত থাকে। একটা সময় ২৩০০ পয়েন্ট পড়ে যায় সেনসেক্স। ২০১০-এর পর এক দিনে সবচেয়ে বড় পতন এটি।
পাকিস্তান : গতকাল পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জের কেএসই-১০০ সূচকটি ২১০৬ পয়েন্ট কমে যায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৪৫ মিনিটের জন্য লেনদেন বন্ধ রাখা হয়।
জাপান : করোনাঝড় ও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় জাপানের পুঁজিবাজার টালমাটাল। একদিনে জাপানের নিক্কেই সূচক কমেছে ১০৫০ পয়েন্ট বা ৫.০৭ শতাংশ। নিক্কেই সূচক গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে। একে একে ধস নামে হংকং, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারেও।