মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : যে রাধে, সে চুলও বাধে ঠিক তেমনি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শেখরী নগরের কৃষক আব্দুল খালেকের স্ত্রী মজিরন বিবি(৫০)। ৩০ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ কৃষি কাজে স্বামীকে সাহায্য করে সংসার জীবনে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়েছে এই দম্পতী। চলতি বছরে ৫০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছে মজিরন দম্পতী, ফলনও আশানুরুপ হয়েছে।

খুচরা ও পাইকারী বাজারে এ বছর মিষ্টি কুমড়ার কদরও রয়েছে প্রচুর। উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সারি সারি  মিষ্টি কুমড়া ঝুঁলছে মজিরন বিবির (জাংলা) মাচাতে। এ মৌসুমে প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে মজিরন দম্পতী আর তাদের অনুসরন করে আশেপাশের অনেকেই মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর বেলা থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত মিষ্টি কুমড়ার খেতে দেখা যায় মজিরন বিবিকে। স্বামী আব্দুল খালেককে সাহায্য করতে নিজেই(মজিরন) মিষ্টি কুমড়ার মাচা থেকে সারি সারি ঝুঁলন্ত কুমড়া কাচি দিয়ে কেটে স্বামীকে দিচ্ছে এবং সে তা ঝাঁকাতে করে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমাট করে রাখছে। কাঁটা শেষ হলে ভ্যানে করে গোলড়া পাইকারী বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায় মজিরনের স্বামী আব্দুল খালেক। প্রতিটি কুমড়া পাইকারী বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা করে বিক্রয় করছে এবং খুচরা বাজারে ওই কুমড়া আকার ভেঁদে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।

মজিরন বিবির স্বামী আব্দুল খালেক স্বাধীন বাংলাকে বলেন, আমি এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। সার বীজ থেকে শুরু করে মাচা(জাংলা) দেওয়া পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত আমার মিষ্টি কুমড়ার খেত খেকে ৭০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রয় করেছি আরো দেড় লক্ষ টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারবো। মিষ্টি কুমড়া চাষে খরচ কম তবে লাভের পরিমান বেশি যার কারনে প্রতি বছর আমি মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করি। আমার মিষ্টি কুমড়ার আবাদ দেখে অনেকেই এ বছর আবাদ করেছে।

মজিরন বিবি স্বাধীন বাংলাকে বলেন, আমাদের সংসারে অভাবের তারনায় আধাপেট খেয়ে দিনাতি দিন পার করেছি। কিভাবে ৪ মেয়েকে বড় করবো তাদের বিয়া সাধি দিবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। বাধ্য হয়ে ওনার(স্বামী) কাজে সাহায্য করতে শুরু করলাম, বছব ঘুরতে না ঘুরতে আমাগো সংসারে অভাব গোছাতে শুরু করলো। তার পর থেকে প্রতি বছর মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করতে শুরু করি।প্রতি বছর মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করে প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই লক্ষ টাকা লাভ থাকে আমাদের এবং এ বছরও এরকমই থাকবে।

মোঃ সুলতান উদ্দিন নামের আরো এক মিষ্টি কুমড়ার চাষী বলেন, আমি মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজ থেকে মাষ্টার্স পাশ করেছি চাকরি পাইনি  তাই কৃষি কাজ করছি খালেক আমার আপন বড় ভাই ভাইকে দেখে এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছি। আমার এ পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং মিষ্টি কুমড়ার ফলনও ভালো হয়েছে। বর্তমানে যে দরে কুমড়া পাইকারি বাজারে বিক্রি করছি এ রকম দাম থাকলে লক্ষাধিক টাকা লাভ থাকবে বলেও জানান এই মিষ্টি কুমড়া চাষী।

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান স্বাধীন বাংলাকে বলেন, মিষ্টি কুমড়া কৃষি খাতে এক নতুন দিগন্তর সূচনার সৃষ্টি করেছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি কুমড়া ফলন ভালো হয়েছে। সাটুরিয়ার সদর ইউনিয়নের শেখরী নগরের মজিরন দম্পতীর খেতে মিষ্টি কুমড়া বাম্পার ফলন হয়েছে এবং যে দাম পাইকারী বাজারে আছে এই দর থাকলে মজিরণ দম্পতী এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা লাভের মুখ দেখবেন। এছাড়া আমরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।