নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে চলছে সাধারণ ছুটি। কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী আগামী ১৫-১৬ এপ্রিলের মধ্যে সংসদ অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে আবার বসার নিয়ম থাকলেও এবার সেটির ব্যত্যয় ঘটতে চলেছে। চলতি সংসদের সর্বশেষ ষষ্ঠ অধিবেশন শেষ হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার অধিবেশন ডাকা সম্ভব না-ও হতে পারে। তবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদের বৈঠক করার চিন্তা চলছে। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে ।
সংসদ সূত্র জানায়, সংবিধান অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের অধিবেশন থেকে আরেক অধিবেশনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের বেশি বিরতি দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিস্থিতি সংবিধানের বাধ্যবাধকতার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আগামী ১১ এপ্রিলের পরে সাধারণ ছুটি আর না বৃদ্ধি পেলে সমস্যা হবে না। কিন্তু ছুটি বাড়লে সংবিধানের নির্দেশনা পালন ও জটিলতা দেখা দেবে।
একাদশ সংসদের শেষ অধিবেশন শেষ হয়েছিল চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে সংসদ অধিবেশন শুরুর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটির মেয়াদ ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ছুটি না বাড়লে ১২ ও ১৩ এপ্রিল কর্মদিবস, আর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল দুদিন কর্মদিবস, ১৭ এপ্রিল এর মধ্যে ছুটি। তাই অধিবেশন ডাকার মত সময় রয়েছে ১৫ কিংবা ১৬ এপ্রিল ।
এ বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন সামপ্তের ৬০ দিনের মধ্যে সংসদ অধিবেশন আহবান করতে হবে। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার মতো কোনো নির্দেশনা সংবিধানে নেই। প্রয়োজনে একদিনের জন্য হলে সংবিধানে অধিবেশন বসতে হবে। সংসদের বৈঠক কখন কোথায় হবে তা নির্ধারণ করবেন রাষ্ট্রপতি।
সংবিধানের ৭২, অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাষ্ট্রপতি সংসদ আহবান করবেন। রাষ্ট্রপতি সংসদ বৈঠকের সময় ও স্থান অধিবেশনের সমাপ্তি নির্ধারণ করবেন। সংসদ অধিবেশন সমাপ্তির ৬০ দিন বেশি বিরতি থাকবে না।
সংসদ সূত্র জানায়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে সংবিধানের নির্দেশনা সংসদের বৈঠকের যৌক্তিকতা নেই। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদ সদস্যদের জনগণের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, একদিনের জন্য হলেও সংসদ অধিবেশন ডেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মুলতবি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সব এমপিদের উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজনে নেই। ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার এমপিরা উপস্থিত থাকলেই হয়। যাতে কোরাম সংকট (৬০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকতে হবে) না হয়।
তিনি বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংসদের বৈঠকে বসার পরিকল্পনা সম্পর্কে পুরোপুরি প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সম্প্রতি ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেছেন। সেভাবেও সংসদ সদস্যদের নিয়ে করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, সংবিধানে অ্যাক্ট অব গড-এ শুধু সংসদ অধিবেশনই নয়, জাতীয় নির্বাচনও পিছিয়ে দেয়া যায়। সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ ৭ বছরও করা যায়। সংসদের অধিবেশন পেছাতে হলে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত প্রস্তাব লাগবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
গত ৯ জানুয়ারি শুরু হয় একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশন। দীর্ঘ ২৮ কার্যদিবস চলার পর শেষ হয় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি।