বিশেষ প্রতিবেদক: বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীতে আতংকিত মানুষ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের থাবায় বাংলাদেশও আক্রান্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সাধারণ মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশের ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এমতাবস্থায় তারা স্থানীয় এমপিদের দিকে চেয়ে আছেন ত্রাণ সহায়তার জন্য। কিন্তু সিলেটের অন্তত ৩ জন এমপিকে খুজে পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। হাস্যরসাত্মক নানা রকম মন্তব্য করছেন ফেসবুক ব্যাবহার কারীরা। কোন কোন এমপির ‘নিখোঁজ’ বিজ্ঞপ্তিও ঘুরে বেড়াচ্ছে নেট দুনিয়ায়।
সিলেট-৫(কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের বর্তমান এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার। তাঁর বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ নতুন নয়। তবে, বর্তমান চরম সঙ্কটময় মুহুর্তে তিনি গরীব, শ্রমজীবী ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়াবেন সেটা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তিনি বরাবরের মতো হতাশই করেছেন। এলাকার সাধারণ মানুষ তাঁর উপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তবে, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণকৃত ত্রাণ সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদারের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে বলে প্রচার করছেন উনার সমর্থকরা।
ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান দৈনিক স্বাধীন বাংলাকে জানান, ‘ত্রাণ হিসেবে এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন থেকে আমরা ৩৫ টন চাল পেয়েছি। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় ভাগ করে দিয়েছি যা ইতোমধ্যে শ্রমজীবী, গরীব ও অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ক্যাশ বরাদ্দ ছিল। সেই টাকা দিয়ে আলু, ডাল, তেল এবং লবন কিনে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করে দিয়েছি।’
স্থানীয় এমপি রেডক্রিসেন্টের মাধ্যমে চিকিৎসকদের জন্য কিছু পিপিই পাঠিয়েছেন জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান- পিপিইগুলো চিকিৎসকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এমপি’র পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত গরীব-অসহায় মানুষের জন্য কোন ত্রাণ তাদের কাছে আসেনি।
কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক- অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানুষের এই চরম দুর্দিনে এখন পর্যন্ত এমপি’র পক্ষ থেকে কোন ত্রাণ সহায়তা কানাইঘাটে আসেনি। এমনকি তিনি এলাকায়ও আসেননি। তবে, জকিগঞ্জে স্বল্প পরিসরে এমপি’র ত্রাণসহায়তা পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি।
ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি লুৎফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ত্রাণসহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আজ (শুক্রবার) কানাইঘাটের ১ নং ইউনিয়নের ৯০০ অসহায় মানুষকে আমরা ত্রাণসহায়তা দিয়েছি। কানাইঘাট পৌরসভা এবং ৬নং ইউনিয়নে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছি। আমাদের ত্রাণ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান।’ উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ত্রাণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। এমপি’র পক্ষ থেকে এখনও কোন ত্রাণসহায়তা তাদের কাছে আসেনি, তবে এমপি’র পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা পাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধ মাসুক উদ্দিন আহমদের কাছে এমপিদের ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- সিলেট ১ আসনে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে সেটা আরো বৃদ্ধি করা হবে। কানাইঘাট-জকিগঞ্জে ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকটা বিরক্তির সুরে বলেন- জনবান্ধব এমপি না হলে যা হয়, সেটাই হচ্ছে কানাইঘাট-জকিগঞ্জে। জনগণের সমস্যায় কোন সময়ই তাঁর (এমপি) দেখা পাওয়া যায় না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক মুজিবুর রহমান ডালিম বলেন- এলাকার সাধারণ মানুষের কোন সমস্যায়-দুর্দশায় হাফিজ আহমদ মজুমদার পাশে থাকেন না। এ নিয়ে এলাকার মানুষ তাঁর উপর অত্যন্ত বিরক্ত। স্থানীয় জনগণ তাঁকে বসেন্তর কোকিল হিসেবে জানেন। জাতির বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে সাধারণ মানুষ স্থানীয় সংসদ সদস্যকে পাশে দেখতে চায়। কিন্তু এ ব্যাপারে তাকে খুবই নির্বিকার দেখা যায়।
সিলেট-৬(বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম নাহিদ। আওয়ামী লীগের গত সংসদে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর গত ২৯ মার্চ তিনি ফেসবুকে গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে মর্মে এলাকার মানুষকে আশ^স্ত করেন। গরীব ও শ্রমজীবী মানুষের সহায়তায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্য গণফোরামের মোকাব্বির খান এলাকায় নেই। এলাকার মানুষের সঙ্গেও তার কোনো যোগাযোগ নেই। কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক নানা পোস্ট দেখা যাচ্ছে। অনেকে তাকে ‘নিখোঁজ’ দাবি করে সন্ধান কামনা করছেন।
সিলেটের অন্যান্য এমপিরা এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার অসহায় মানুষের বাসায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সকল অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ এলাকায় না থাকলেও তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। ঢাকা থেকে তিনি সার্বক্ষণিক ত্রাণ কর্মসূচি মনিটরিং করছেন। স্থানীয় নেতাদেরকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
ত্রাণ তৎপরতার বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল আহমদ দৈনিক স্বাধীন বাংলাকে জানান- মন্ত্রীর নির্দেশ ও মনিটরিংয়ে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। জৈন্তাপুরে ব্যাপকভাবে ত্রাণকর্মসূচি পরিচালনার জন্য সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। উপজেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় প্রবাসী ও বিত্তবানদের সহায়তায় ত্রাণ কর্মসূচি চলছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়ে কামাল আহমদ বলেন- আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। উপজেলার প্রতিটি অসহায়-গরীব মানুষ যেন ত্রাণ পায় সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে মন্ত্রী মহোদয় এলাকায় অবস্থান নিয়ে গরীব, অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষের ত্রাণসহায়তায় অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া সিলেটের সংরক্ষিত আসনের এমপি শামীমা আক্তার খানম এলাকায় উপস্থিত থেকে গরীব, অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। সাধারণ মানুষের খোজখবর নিয়েছেন বলে জানা গেছে।