নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবিক কারণে কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশে ফেরত আনা প্রবাসীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, মানবিক বিবেচনায় কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাইসাপেক্ষে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে কুয়েত থেকে ৩১৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হবে এবং কুয়েতের সেই ফিরতি ফ্লাইটে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়াও ইপিএস এর আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ১৫০ জন কর্মী এবং সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ ২৬ জনকে বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে কোরিয়ায় পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশি প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা ইকামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের ভিসা/ইকামার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোনো কর্মী বিদেশে চাকরিচ্যুত হলে, অথবা নিয়োগকারী কোম্পানি যদি কর্মী ছাঁটাই করে সেক্ষেত্রে তাদের দেশে না পাঠিয়ে সেদেশের অন্য কোনো কোম্পানিতে নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইমরান আহমদ আরো বলেন, প্রবাসীদের আবাসনের সমস্যা হলে সংশ্লিষ্ট মিশনসমূহকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য অর্থ ঋণ সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি প্রাথমিকভাবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন অর্থ-ঋণ সহায়তা প্রদানের কথা জানান।
এছাড়াও তাদেরকে অধিকতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতার মান উন্নয়ন করে পুনরায় বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিদেশ ফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনের নিমিত্ত সরকার ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছে আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হবে। ইতোমধ্যে যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন এবং যাদের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হতে যাচ্ছে। তারা যাতে পুনরায় যেতে পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমন্বিতভাবে প্রবাসীদের এই দুর্যোগ মোকাবেলা করছি।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্যকোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। দেশে ফেরত আনা প্রবাসীকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন বলেন, প্রবাসীরা দেশের সম্পদ। এই দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশীকে ফেরত আনা হচ্ছে। এর ফলে সেসব দেশের সাথে বাংলাদেশের শ্রম কূটনৈতিক সম্পর্ক সুসংহত হবে এবং কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রাধান্য পাবে।
সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। দেশে ফেরত আনা প্রবাসীকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রমুখ।