স্বাধীন বাংলা ডেস্ক : প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে দেশের ৫ জেলায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে খুলনায় বৃদ্ধা, টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শ্রমিক, নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ী ও নেত্রকোনায় এক ব্যক্তি মারা গেছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠনো খবর-
খুলনা : খুলনার রূপসায় জ্বর, সর্দি ও কাশিতে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ-খুমেক হাসপাতালে মারা যান তিনি।
রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান জানান, জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধা এক সপ্তাহ আগে তার নাতির সাথে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। তিনি তথ্য গোপন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেন। পরে সোমবার রাতে তিনি মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে মারা গেছেন।
সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, মৃত বৃদ্ধা ও তার নাতির নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হবে।
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আকতার জানান, যারা ওই নারীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাদেরকে দ্রুত হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে।
টাঙ্গাইল : করোনার উপসর্গ নিয়ে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম খানের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। সোমবার তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না, তা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে দাফন করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলীম আল রাজী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তাকে সোমবার সকালে গোপালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বজনেরা নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাকে মৃত অবস্থায় পান চিকিৎসকেরা।
তিনি রোববার স্থানীয় একজন ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ওই ফার্মাসিস্টের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন, জাহাঙ্গীর আলমের শ্বাসকষ্টসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার নানা উপসর্গ ছিল। ওই ফার্মাসিস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৃত জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি লকডাউন ঘোষণা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই বাড়ি থেকে কেউ যেন বের না হন এবং অন্য কেউ যেন বাড়িতে প্রবেশ না করেন, তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবগ্রামে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার সকাল ১১টার দিকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে বাড়ি ফেরেন শ্রমিক মোজাফ্ফর ও তার সহযোগী। জ্বর বেড়ে গেলে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গভীর রাতে তার দাফন সম্পন্ন করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান, মোজাম্মেল হক মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর এলাকায় কৃষি কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সোমবার বাড়িতে ফেরার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি মারা যান। তার শরীরে জ্বর ও গলা ব্যথা ছিল। তবে সর্দি বা শ্বাসকষ্ট ছিল না।
তিনি আরও জানান, মোজাম্মেলের পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাড়িতে আসার পর তিনি পরিবারের সদস্যদের থেকে আলাদা ছিলেন। এছাড়াও মোজাম্মেলের সঙ্গে আসা একই এলাকার এরান নামে অপর এক ব্যক্তিকে আলাদা রাখা হয়েছে। তবে তার শরীরে করোনাভাইরাসের লক্ষণ দেখা দেয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম খান জানান, চৌডালা ইউনিয়নটি লকডাউন করা হয়েছে। মারা যাওয়া শ্রমিকের সহযোগীকে একটি বাড়িতে আলাদা রেখে বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। গ্রামের প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট।
নারায়ণগঞ্জ : করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে। সোমবার রাত ১২টার দিকে ওই ব্যবসায়ী মারা যান।
মৃতের স্বজনদের দাবি, ৬-৭ দিন ধরে সর্দি-জ্বরে ভুগছিলেন ওই ব্যবসায়ী। রোববার তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে তিনি সোমবার মারা যান। প্রাথমিকভাবে করোনার উপসর্গ বলে তাদের জানানো হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রিপোর্ট দিলে জানা যাবে।
১৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ জানান, মরহুমের পরিবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। লাশ নারায়ণগঞ্জ এনে দাফন করার ব্যবস্থা হচ্ছে।
নেত্রকোনা : নেত্রকোনার পূর্বধলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের শ্যামগঞ্জের কিসমত বারেগা এলাকায় জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরও এক ব্যক্তি (৪০) মারা গেছেন। সোমবার রাত পৌনে ৯টায় নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। এর আগে রবিবার ভোরে একই উপজেলার হুগলা ইউনিয়নে একই উপসর্গ নিয়ে এক নারী (৫০) মারা যান।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বাড়িটিসহ আশপাশের সাতটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, ওই ব্যক্তি গত বুধবার থেকে হঠাৎ করে হালকা জ্বর ও কাশি সমস্যায় ভুগছিলেন। রবিবার থেকে তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। খবর পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকরা সোমবার সকালে তার রক্ত সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান। তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করা হয়। কিন্তু রাত পৌনে ৯টায় তিনি মারা যান।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ওই ব্যক্তির মৃত্যুতে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে আটটি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। আর মৃতদেহের কাছে কাউকে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পোষাক পরে মৃতদেহ দাফন করা হবে।
জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা তার শরীর থেকে সংগ্রহীত নমুনা পরীক্ষার পর জানা যাবে। এর আগ পর্যন্ত ওই বাড়িটিসহ আশপাশের সাতটি বাড়ি লকডাউন থাকবে।