স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট: বর্তমান মহাসঙ্কট করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ‘জাতীয় টাস্ক ফোর্স’ গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। টাস্কফোর্স গঠনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘‘এখন যে পরিস্থিতি টাস্কফোর্স গঠন করলে সুসমন্বিত, সুচিন্তিত ও সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নেয়া সহায়ক হবে। নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায় কোনো খাদ্যের ঘাটতি নয়, খাদ্য বণ্টনে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিদ্ধান্তহীনতা, সুশাসনের অভাব দুর্ভিক্ষের কারণ হতে পারে।” শুক্রবার দুপুের এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।
করোনা দুযোর্গের নানামুখী প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হবে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, এমতাবস্থায় এ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে সুসমন্বিত ও সুবিবেচিত কর্মপরিকল্পনা, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজ বণ্টন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেয়ার জন্যে একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব আমরা করছি। এই টাস্কফোর্সে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, সশ্বস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করে এই টাস্ক ফোর্সকে অর্থবহ ও গতিশীল করার মাধ্যমে কার্য্করী পদক্ষেপ নেয়া এখন সময়ের দাবি। আমাদের লড়াই করতে হবে এবং সেই লড়াইয়ে অবশ্যই জয়ী হতে হবে।”
তিনি বলেন, ‘‘ তাই এখনই খাদ্য ও ত্রাণ বণ্টনে এবং করোনার পরবর্তী পুনর্বাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। সবার আগে এখন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং টেস্ট টেস্ট টেস্ট প্রয়োজন। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়াটা দেয়া সবচেয়ে আগে। যাদের আইসোলেশনে নেয়া হচ্ছে এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটা সমস্যা দেখা দিয়েছে যারা দিন আনে দিন খান, দিন মজুর যাদেরকে বলা হচ্ছে যে, ঘরে থাকো। ঘরে থাকলে তো খাবার আসছে না।”
ফখরুল বলেন, ‘‘এদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো, তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা এবং তাদের বাচিয়ে রাখা সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। এটার জন্য উপযুক্ত হচ্ছে সামরিক বাহিনী। তারা স্থানীয় যে প্রশাসন আছে, জনপ্রতিনিধি আছে, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনগুলো আছে তাদের নিয়ে এই কাজটা সহজে করা যেতে পারে। অতীতে দুই-একবার এই কাজগুলো হয়েছে তাদের নিয়ে। তাদের (সামরিক বাহিনী) সাংগঠনিক যে দক্ষতা, তারা চুরি-টুরির মধ্যে থাকবে না-এই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা ঐক্যের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাম গণতান্ত্রিক জোট বা বাম মোর্চার ঐক্যের একটি পরামর্শ সভায়ও আমি যুক্ত হয়েছিলাম। আমরা কোনো রকমের সংকীর্ণতায় ভুগতে চাই না। আমরা মনে করি যে, এখন জাতীয় ঐক্যটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।”
বিএনপি কোনো কাজ করছে না বলে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীরা যে অভিযোগ করেছেন এই সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘‘বিষয়টা হচ্ছে যে, একটা রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে সরকার। সরকারের যদি জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না, মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে না। যার ফলে এটা সরকার উপলব্ধি করছে না যে, এখন যেটা দরকার সবাইকে একখানে আনা। তাদের মধ্যে একটা ধারণা সৃষ্টি করা যে, আমরা যা কিছু করছি-ঐক্যবদ্ধভাবে করছি। ভারতে দেখুন, সেখাকার প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে কথা-বার্তা বলেছেন সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে। অন্যান্য রাজ্যের চিফ মিস্টিনারের সাথে উনি কথা বলছেন, কথা বলেই কিন্তু তিনি হয়তো তার কাজটাই করছেন। কিন্তু আলাপ-আলোচনা করে নিচ্ছেন সকলের সঙ্গে। এটা খুবই প্রয়োজন তো।”
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি তো সবচেয়ে বড় দল। সেই বড় দলকে আপনি একেবারেই বাদ দিয়ে নিজের মতো করে কাজ করছেন, করেন। ফলো তো করছেন আমাদেরকেই দেখা যাচ্ছে। আমরা যা যা বলেছি সেই কাজগুলোই তো করছেন। সেইটাকে সুন্দর-সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে এই গালিগালাজগুলো বাদ দিয়ে, ওই সমস্ত কথা-বার্তা বাদ দিয়ে আসল জায়গাতে আসুন। যেটা আমরা বার বার বলছি, দুঃস্থ মানুষকে বাঁচানো হচ্ছে বড় কাজ।”
তিনি বলেন, ‘‘ কিভাবে আহজারি করছে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা, কীভাবে আহজারি করছে গৃহকর্মীরা, এরা অত্যন্ত দুঃস্থ হয়ে গেছে এখন কাজ নেই। যে বস্তিতে তারা থাকে সেখানে ঘর ভাড়া দেয়ার উপায় নেই, সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদও করা হচ্ছে।”
শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক মো. মঈন উদ্দীনের মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া মহাদুযোর্গে কাজ করে যাওয়া চিকিতসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সামরিক বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী এবং সাংবাদিকদের ভূমিকার প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।