ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, যা মানুষকে ইহকাল এবং পরকালের সফলতার দিকে পরিচালিত করে। ইসলাম মানুষকে পারস্পারিক সহযোগীতার লক্ষ্যে অংশীদারিত্ব ও সহমর্মীতার কথা বলে। পারস্পারিক সহযোগীতার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয় ইসলামী জীবন ব্যবস্থা। এই ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় কিভাবে একটি বীমা কোম্পানি পরিচালিত হতে পারে সে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের কর্মকাণ্ডকে ভিত্তি করে আমার আজকের এই লেখা।
বাংলাদেশে খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ, শিল্পপতিসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, মালিক ও পরিচালকদের উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহ করে দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বেকার সমস্যা সমাধান, দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা সৃষ্টি, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করার মানসে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম ওলামাদের শরীয়াহ্ কাউন্সিল দ্বারা কোম্পানির সকল কার্যক্রম ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয়।
গতানুগতিক বীমা কোম্পানিতে না গিয়ে মানুষ কেন জেনিথ ইসলামী লাইফে আসবে সেটা দেখা যাক:
প্রচলিত অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো সুদ। আর এই সুদকে আল্লাহ তা’আলা হারাম করেছেন এবং হযরত মুহাম্মদ (সা:) এই সুদকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। তাই মানুষ সুদ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামী বীমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এ জীবন বীমা গ্রহণের মাধ্যেমে সঞ্চয় ও পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা তৈরি করবেন।
এ ছাড়াও -
১। সুদ, অস্বচ্ছতা ও জুয়ার উপাদানমুক্ত আর্থিক সঞ্চয় ব্যবস্থা করা।
২। ইসলামী মুদারাবা এবং তাকাফুলের নীতির ভিত্তিতে ইসলামী বীমা প্রতিষ্ঠা করা।
৩। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক কল্যানমুখী জীবন বীমা (তাকাফুল) ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।
৪। ইসলামী জীবন বীমা তাকাফুলের মাধ্যকে ব্যক্তি ও পরিবারের অধিকতর নিরাপত্তা সেবা প্রদান করা।
৫। মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূর করা এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
৬। সর্বোপরি ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক ইসলামী বীমা (তাকাফুল) এর ভিত্তিতে নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয়কে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে প্রত্যোক বীমা গ্রহীতার এখানে আসা উচিত।
ইসলামী বীমার শরীয়াহগত ভিত্তি বা উৎস:
ইসলামী শরীয়াহর ভিত্তি হলো কুরআন ও সুন্নাহ্। বীমা ব্যবস্থা ইসলামী অর্থনৈতিক বিধানের আওতাভুক্ত। ঝুঁকি ও সঞ্চয় বীমার ক্ষেত্রে সুদমুক্ত। হালাল ও ইসলামী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন। তাকাফুল ব্যবস্থার মাধ্যমে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ও সাদাকা তহবিলের মাধ্যমে সন্দেহজনক আয় থেকে মুদরাবা ও তাকাফুল তহবিল সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
সাধারণ বীমা ও ইসলামী বীমার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য:
ইসলামী বীমা (তাকাফুল) ও প্রচলিত বীমার মধ্যে বিভিন্ন পার্থক্য বিদ্যমান। লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কর্মকাণ্ড ও কার্যপ্রণালীর দিক থেকে ইসলামী বীমা ও প্রচলিত বীমার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেগুলো হলো-
১। ইসলামী শরিয়তের অনুশাসনের ভিত্তিতে তাকাফুল বা ইসলামী বীমা পরিচালিত হয়। অন্যদিকে প্রচলিত বাণিজ্যিক বীমা ব্যবস্থায় শরীয়াহ পালনের প্রতিশ্রতি নেই।
২। ইসলামী বীমার প্রাথমিক উদ্দেশ্য; পারস্পারিক কল্যাণ ও লাভ-লোকসানের সমান ভাগাভাগি। অন্যদিকে প্রচলিত বাণিজ্যিক বীমার উদ্দেশ্য কেবল মুনাফা অর্জন।
৩। শরীয়াহ মূলনীতি অনুসারে সকল প্রকার লেনদেন কর্মকাণ্ডে সুদ পরিহার করতে হয় ইসলামী বীমায়। অন্যদিকে প্রচলিত বীমা ব্যবস্থায় সুদভিত্তিক লেনদেন করা হয় এবং তাতে কোন বাধা নেই।
৪। ইসলামী বীমার সবকিছুতে সচ্ছতা ও পরিচ্ছন্নতা থাকতে হয়। অন্যদিকে প্রচলিত বীমা পলিসিতে অস্বচ্ছতা বা গারারের উপাদান থাকে।
৫। ইসলামী বীমা পলিসিতে জুয়ার কোন উপাদান থাকতে পারে না। অন্যদিকে প্রচলিত বীমায় জুয়ার উপাদান থাকার সুযোগ রয়েছে।
৬। ইসলামী বীমায় মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে যাকাত বা সাদকা তহবিল গঠন করা হয়। অন্যদিকে প্রচলিত বীমায় এ ধরণের কোন তহবিল গঠণের বিধান থাকে না।
৭। ইসলামী বীমায় শরীয়াহ পালন নিশ্চিত করার জন্য শরীয়াহ কাউন্সিল থাকে। অন্যদিকে প্রচলিত বীমায় এ ধরণের কোন প্রকার কাউন্সিল গঠন করা হয় না।
প্রচলিত ইসলামী বীমা সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ:
দেশের চলমান ইসলামী বীমা সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়াতে অভিযোগ করা হয়ে থাকে যে, ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো কোন প্রকার শরীয়াহ আইন ছাড়াই চলছে। এমনকি নামকাওয়াস্তে শরীয়াহ আইন দেখিয়ে গ্রাহকদের ঠকিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
এক্ষেত্রে আমি মনে করি, বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ। এদেশে প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। কিন্তু দেশের সরকার বা সরকারী ব্যবস্থাপনার মধ্যে শরীয়াহ আইন নেই। কিন্তু ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পরিচালনার জন্য একটি কেন্দ্রীয় শরীয়াহ কাউন্সিল রয়েছে। উক্ত কাউন্সিলে পরামর্শে ও দিক নির্দেশনায় ইসলামী ইন্স্যুরেন্সগুলো পরিচালিত হয়।
ইসলামী ইন্স্যুরেন্স পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো বিনিয়োগ। তবে এই খাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী বণ্ড চালু করাতে উক্ত সমস্যার কিছু সমাধান হয়েছে। দেশের বিভিন্ন ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামী বীমাগুলো বিনিয়োগ করেছে। বিভিন্ন মিডিয়াতে নেগেটিভ যেসব নিউজ করা হয় তা সম্পূর্ণ সত্য নয়। কোন একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে জনগণের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন করতে হলে মিডিয়াগুলোকে আরো গঠনমূলক নিউজ করে ইসলামী অর্থনীতি উন্নয়নের ভূমিকা রাখার জন্য আমি অনুরোধ করবো। না হলে দেশে ইসলামী অর্থনীতি বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হবে। মানুষকে সুদ থেকে বাঁচানো যাবে না।
তাকাফুল বা ইসলামী বীমার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং বর্তমান ইসলামী বীমা কোম্পানির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একই।
লেখক- এস এম নুরুজ্জামান
সিইও জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। zaman15april@gmail.com