স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দুঃসময়ে আরেক বিপদের মুখোমুখি বাংলাদেশ। উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে নতুন এক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি নিয়ে রোববার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যালোচনা অনুযায়ী যদি ঘূর্ণিঝড়টি তার গতি ও দিক পরিবর্তন না করে, তাহলে আগামী ১৯ মে দিবাগত রাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখতে জন্য ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সোমবার ভোর ৬টার তথ্য বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদফতর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সরাসরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারে । তারা বলছে, খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে আগামী মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। তাই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবেÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যেন মানুষজনকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায় সে লক্ষ্যে এবার আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে যাতে কারও খাবারের অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। জেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে জানিয়ে এনামুর বলেন, দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ না থাকলে তার বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে জেলা প্রশাসনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে ১৯ মে (মঙ্গলবার) শেষরাত থেকে ২০ মে (বুধবার) বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে, যাতে স্বল্প সময়ের নোটিশে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারে। সেই সাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।