স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট : বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে বুধবার বিকেল নাগাদ খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমন অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:-
খুলনা : ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে খুলনার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জনকে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আনার পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। ঝড়ের সার্বিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটাসহ বিভিন্ন উপজেলায় রেডক্রিসেন্ট, সিপিপিসহ ২ হাজার ৪৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এছাড়া, বেসরকারি এনজিও’র উদ্যোগে রয়েছে আরও ১ হাজার ১০০ স্বেচ্ছাসেবক। এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে প্রয়োজনে উপকূলবাসীকে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা কাজ করছেন। উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাট : ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় দেশের উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে প্রশাসন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুর্গতদের আশ্রয় দিতে জেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্কুল ও কলেজগুলো খোলা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, স্থানীয় মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি মজুদ রাখতে বলা হয়েছে। তিনি জানান, এই দুর্যোগে মাঠে থাকা বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তুলতে কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় মোংলা বন্দরের জাহাজ ও নৌযান নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
হারবার মাস্টার শেখ ফকর উদ্দিন বলেন, বন্দরে বর্তমানে সার, ফ্লাইএ্যাশ, কয়লাবাহী মোট ১১টি দেশি-বিদেশি জাহাজ রয়েছে। বিকেল নাগাদ আরও চারটি জাহাজ বন্দরে ভেড়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরে অবস্থান নেওয়া জাহাজগুলোতে পণ্য ওঠানামার কাজ অব্যাহত রয়েছে। বন্দরে একটি ঝড় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ঝড় মোকাবেলায় বন্দরের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা : ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে রোববার রাতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা হয়েছে।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, উপকুলের বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩৭টি পয়েন্টে ঝুকিপূর্ণ আছে। এগুলো সার্বক্ষণিক তদারকি করার জন্য জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১৪৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে সোমবার বিকেলে মধ্যে ঝুকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া উপদ্রুত এলাকায় ১ হাজার ৭৯৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। সেগুলোকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে উদ্ধারকারী দল উপকূল এলাকায় পৌঁছে গেছে। তারা এলাকার নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছেন। সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে উপদ্রুত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবিলায় পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, বিজিবি সহায়তা করছে। প্রয়োজনে অন্যবাহিনীর সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করা হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আজ সোমবার সকালে এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।