নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রতিষেধক-বিহীন প্রাণসংহারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে টানা ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে আজ সীমিত আকারে খুলেছে দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও চলবে পুরোদমে। শর্তসাপেক্ষে চলাচল করবে অভ্যন্তরীণ রুটের বিমান, বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ অন্যান্য গণপরিবহন। তাছাড়া আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত সীমিত পরিসরে অফিস খোলা রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চায় সরকার। এ সময়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে সরকারের এ সিদ্ধান্ত নেয়ায় বিভিন্ন মহলে দেখা দিয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিও জনিয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। কেউ কেউ বলছেন বিরাজমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির গতি সঞ্চারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে লকডাউন পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক করার বিকল্প নেই।
শঙ্কার মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে মানুষ। সরকার অবশ্য স্বাস্থ্যবিধি ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু এতেই শেষ রক্ষা হবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন নিজের সুরক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। এজন্য সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলছেন, যে হারে করোনারভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তাতে এমনিতেই ভয়ে ছিলাম। এরপর আবার অফিস খুলে দিলো সরকার। দায়িত্বের প্রয়োজনে অফিসে তো যেতেই হবে। কিন্তু করোনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো কিনা, পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের রক্ষা করা যাবে কিনা তা নিয়েই শঙ্কায় আছি।
সচিবালয়ের ২২তলা ৬ নম্বর ভবনের উপরের দিকের ফ্লোরে অফিস এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ভবনে উঠতে ছয়টি লিফটের একটি মন্ত্রী ও সচিবদের জন্য নির্দিষ্ট করা। অন্য পাঁচটি লিফটে গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে উপরে উঠতে হয়। তিনি বলেন, লিফটের জন্য অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এই ভবনে উঠতে হয়। লিফট থেকেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকবে। আমি অফিস করতেই ভয় পাচ্ছি, কিন্তু অফিসে না এসেও কোনো উপায় নেই।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী মলি সাহা বলেন, সবকিছু খুলে গেলে তো বের হতেই হবে। আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তো থাকবেই। কিন্তু কী করে করোনাকে এড়িয়ে চলা যায় তাও শিখতে হবে। কারণ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এভাবে ঘরে বসে থাকলে চলবে কী করে, মানুষকে তো কাজ করতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অফিস-আদালত খুলে যাওয়ার পাশাপাশি গণপরিবহন খুলে দেওয়ায় মানুষের যাতায়াত বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা মানুষের যাতায়াত আর সীমিত রাখা যাবে না। এটিই করোনা বিস্তারের সব থেকে বড় মাধ্যম। করোনার বিস্তার রোধে মানুষের যোগাযোগ সীমিত রাখার ওপর সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়। তবে সরকার বলছে স্বাস্থ্যবিধি ঠিক রেখে চলবে গণপরিবহন। তবে সীমিত সাধ্যের মধ্যে অতিরিক্ত মানুষের ভিড় সামাল দেওয়া খুব সহজ বিষয় হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) লকডাউন তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত পূরণের কথা বলেছিল তার একটিও পূরণ করার আগেই সব কিছু খুলে দেওয়াতে শঙ্কা আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে মানুষকে অবশ্যই ব্যক্তিগত সুরক্ষার কথা চিন্তা করতে হবে। যেহেতু ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে তাই আক্রান্ত হলেই ভড়কে গেলে চলবে না। শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রচুর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন সি খেতে হবে। যাতে করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
সুরক্ষার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সোলতান আহ্মদ বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১৩ দফা নির্দেশনা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এসব সতর্কবাণী বিভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোথাও গাদাগাদি করে বসলে তা অ্যাড্রেস করা হবে। আমরা এটাও ভাবছি যে, যেসব কর্মচারীর এই সময়ে প্রয়োজন নেই তাদের অফিসে না আসতেও বলা হতে পারে, এটা অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত হবে।