ক্রীড়া ডেস্ক : অনুশীলনে ফিরে ঊরুর ইনজুরিতে পড়ায় অনিশ্চয়তা ছিল তার মাঠে নামা নিয়ে। ম্যাচের আগেরদিন অভয় দেন কোচ কিকে সেতিয়েন, জানান পূর্ণাঙ্গ ফিট লিওনেল মেসিকে নিয়েই খেলতে নামবে বার্সেলোনা। আর ফুল ফিট মেসি কী করতে পারেন, তা আরেকবার দেখল ফুটবল বিশ্ব।
করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকার পর শনিবার রাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছে বার্সেলোনা। মায়োর্কার মাঠ থেকে ফিরেছে ৪-০ গোলের বড় জয় নিয়েই। বার্সার এই দুর্দান্ত জয়ে গোল করেছেন মার্টিন ব্র্যাথওয়েট, আর্তুরো ভিদাল, জর্দি আলবা ও লিওনেল মেসি। তবে দুই গোলে অ্যাসিস্ট আর দলের শেষ গোল করে রাতটা স্মরণীয় করে রাখলেন মেসিও।
শনিবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টায় মেসিরা স্টেডিয়ামে ঢুকেছেন মাস্ক আর গ্লাভস পরে। মাঠে গোল উদযাপনেও বজায় রেখেছেন যথাসাধ্য শারীরিক দূরত্ব।
পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা কাতালান জায়ান্টরা করোনা বিরতি বেশ ভালোই কাজে লাগিয়েছে। পুরো ফিট মেসিকে শুরু থেকেই নামতে দেখা ছিল খুদে জাদুকরের ভক্তদের জন্য দারুণ স্বস্তির কারণ। ফিট হয়ে ফিরেছেন অস্ত্রোপচারের পর অনিশ্চিত হয়ে পড়া লুইস সুয়ারেসও। তবে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারকে এ রাতে বেঞ্চ থেকেই শুরু করতে হলো। তা ছাড়া নতুন নিয়মে ৫ জন বদলি খেলোয়াড় রাখার নতুন নিয়মও কিকে সেতিয়েনের জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছে।
এবার আসা যাক আসল খেলায়। খেলার মাত্র ৬৫ সেকেন্ডে জর্দি মিনিটেই গোল করে ম্যাচের গতিপথ অনেকটা ঠিক করে দেন ভিদাল। ডি-বক্সের কাছ থেকে বল দখল করে আলবার দিকে বল পাঠান ফ্র্যাংকি ডি ইয়ং। সঙ্গে সঙ্গে আলতো ক্রসে বল ভিদালের পথে তুলে দেন আলবা আর দারুণ এক হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন চিলিয়ান মিডফিল্ডার।
গোল হজম করে এলোমেলো হয়ে পড়া মায়োর্কা অবশ্য আস্তে আস্তে গুছিয়ে নেয়। আক্রমণে ওঠে আসে স্বাগতিকরা। তবে মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান দেয়াল হয়ে দাঁড়ানোয় বিপদ থেকে বেঁচে গেছে সফরকারীরা। উল্টো ৩৭তম মিনিটে মেসির অসাধারণ আ্যসিস্ট থেকে বার্সার জার্সিতে নিজের প্রথম গোলের দেখা পান ব্র্যাথওয়েট।
প্রতিপক্ষের রক্ষণে বল পেয়ে ডিফেন্ডারের উপর দিয়ে তা ব্র্যাথওয়েটের দিকে পাঠিয়ে দেন ডি জং। ডিফেন্সের জটলায় থাকা মেসির দূরদর্শী হেড বল ঠিক জায়গামতো যেতেই ডান পায়ের ভলিতে লক্ষ্যভেদ করেন ব্র্যাথওয়েট। অবশ্য গোলের বাঁশি বাজানোর আগে ভিএআর`র সহায়তা নেন রেফারি। বার্সা এগিয়ে যেয় ২-০ গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে মায়োর্কা খেলায় ফেরার সবরকম চেষ্টাই করে। কিন্তু এবারও বার্সার রক্ষণ অটুট থাকে। বরং ৫৭তম মিনিটে গ্রিজম্যানের বদলে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা সুয়ারেস নামতেই কাতালানদের আক্রমণের ধার বেড়ে যায়। তিনি মাঠে নানার মিনিটখানেক পরেই দারুণ এক গোলের সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু পোস্টের একদম কাছ থেকে পা লাগিয়েও বল সাইডলাইনে পাঠিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ব্র্যাথওয়েট।
৭৯তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল করে বার্সার বড় জয় নিশ্চিত করেন আলবা। শুরুতে অ্যাসিস্ট করেছিলেন, শেষটায় পেলেন গোল।স্প্যানিশ সেন্টারব্যাকের এই গোলে সরাসরি ভূমিকা ছিল মেসিরও। তিন মাসের বিরতি যে বার্সা অধিনায়কের খেলায় কোনো মরিচা ধরাতে পারেনি তা প্রমাণ করে দিলেন তিনি। বাঁ প্রান্ত থেকে তার বাড়িয়ে দেওয়া বল ধরেই অরক্ষিত মায়োর্কা রক্ষণে ঢুকে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন আলবা। আর শেষ মুহূর্তে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারকে বোকা বানিয়ে পায়ের জাদুতে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে মৌসুমে ২০তম গোলে করেন এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
চার গোলের এ জয়ে নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে গেলো বার্সেলোনা। লিগের ২৮ ম্যাচ শেষে ১৯ জয় ও ৪ ড্র নিয়ে তাদের সংগ্রহ ৬১ পয়েন্ট। আজ রাতে মাঠে ফেরার অপেক্ষায় থাকা রিয়াল ২৭ ম্যাচ থেকে নিতে পেরেছে ৫৬ পয়েন্ট।