শাজাহান সিরাজ কালজয়ী মহান নেতা হিসেবে অমর হয়ে থাকবেন: নূরে আলম সিদ্দিকী
14, July, 2020, 8:17:0:PM
স্বাধীন বাংলা ডেস্ক: স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক, মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত সংগঠক শাজাহান সিরাজ মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি ইহজগত হতে পরলোকে গমন করলেও স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠনের গৌরবে চিরঞ্জীব ও কালজয়ী মহান নেতা হিসেবে তিনি অমর হয়ে থাকবেন, ইনশাল্লাহ। শাজাহান সিরাজের মৃত্যুর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এ মন্তব্য করেছেন স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, আমি তাঁর(শাহাজান সিরাজ) বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। রাজনীতিতে মতের ভিন্নতা থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনে তিনি আমার সহোদরপ্রতিম ছিলেন। -যোগ করেন নূরে আলম সিদ্দিকী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহজাহান সিরাজ (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিভিন্ন বাধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সেই সময় তিনি টাঙ্গাইলের করটিয়া সা’দত কলেজের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে ছাত্র-রাজনীতিতে উঠে আসেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি করটিয়া সা’দাত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’র (যার অন্য নাম নিউক্লিয়াস) সক্রিয় কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।
শাহজাহান সিরাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের ‘চার খলিফা’ বলা হতো শাহজাহান সিরাজ ছিলেন তাদেরই একজন। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ তিনি সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল কুদ্দুস মাখন, নূরে আলম সিদ্দিকী, আ স ম আবদুর রব প্রভৃতি ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আবদুর রব। সেখান থেকেই পরদিন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের পরিকল্পনা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক ছাত্রসমাবেশে বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেন শাহজাহান সিরাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব নেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর শাহজাহান সিরাজ সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হন শাহজাহান সিরাজ। পরে জাসদের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। জাসদের মনোনয়নে তিনবার তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বেগম খালেদা জিয়া সরকারের শেষ পর্যায়ের দিকে বন ও পরিবেশমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী, সাবেক ছাত্রনেত্রী রাবেয়া সিরাজের সঙ্গে ১৯৭২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাহজাহান সিরাজ। তাদের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। তার স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ একজন শিক্ষিকা এবং রাজনীতিবিদ।