নিজস্ব প্রতিবেদক : সারাদেশে গৃহহীন, ভূমিহীনদের পুনর্বাসনে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে আমি যেভাবে পারি গরিবানা হালে একটা চালা হলেও সেটা আমরা করে দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট বরাদ্দ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথম ধাপে উদ্বোধন হওয়া ভবনগুলোতে ফ্ল্যাট পেয়েছেন ৬০০টি পরিবার। এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম ধাপে নির্মিত পাঁচতলা ২০টি ভবনসহ প্রকল্পের মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট।
সবগুলো ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। ১০০১ টাকা নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে আমি যেভাবে পারি গরিবানা হালে হলেও একটা চালা করে দিলেও সেটা আমরা করে দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে যেমন ঘর করে দিচ্ছি, পাশাপাশি যাদের জমি আছে তাদের ঘর করে দেওয়ার জন্য গৃহায়ন তহবিল নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা তহবিল করা আছে, সেখান থেকে যেকোনো প্রতিষ্ঠান টাকা নিয়ে ঘর করতে পারে। আর আমরা নিজেরাও আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমেও যাদের জমি আছে, ভিটা আছে, কিন্তু ঘর নাই তাদের ঘর করে দিচ্ছি।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার একটু বন্যার প্রকোপটা বেশি দেখা যাচ্ছে। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসের দিকে আরও পানি আসবে। অর্থাৎ আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে।
বন্যায় ও নদীভাঙনে যারা গৃহহারা হচ্ছেন তাদেরও ঘরবাড়ি করে জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাজেটে আমরা আলাদাভাবে টাকাই রেখে দিয়েছি গৃহহীন মানুষের ঘর করে দেওয়ার জন্য। যাতে একটি মানুষও গৃহহারা না থাকে।
কক্সবাজারকে পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার হচ্ছে আমাদের একটা পর্যটন এলাকা। কক্সবাজারকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চাই একটা পর্যটন শহর হিসেবে।
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকেও উদ্বাস্তু হিসেবে থাকতে হয়েছিল। অর্থাৎ আমরা রিফিউজি হিসেবেই ছিলাম। কাজেই রিফিউজি হিসেবে থাকার যন্ত্রণা সেটাও আমাদের জানা আছে।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এতদিন বস্তির ঝুপড়ি ঘরে কষ্টের জীবন শেষে দালানে উঠতে পেরে আবেগাফ্লুত হয়ে পড়েন তারা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দেন তারা। এ আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান উপকারভোগীরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
গণভবন প্রান্তে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যারলয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কক্সবাজার প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সংসদ সদস্য, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।