স্বাধীন বাংলা রিপোর্ট: মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা আগামী ১ আগস্ট শনিবার। হাতে সময় আছে মাত্র ২ দিন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার চিত্র একেবারে ভিন্ন। অন্যান্য বছর ঈদুল আযহার ৪-৫দিন আগ থেকেই যাত্রীদের প্রচন্ড চাপে অস্থির ছিলেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এবারের ঈদে বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে দায়িত্বরত লোকজনকে টিকির বিক্রির জন্য ডাকচিৎকার করতে দেখা যাচ্ছে। যাত্রী সংকটে টার্মিনাল থেকে সময়মতো গাড়ীও ছাড়তে পারছেন না কাউন্টারে লোকজন।
কথা বলে জানা গেছে, গতবছর ঈদের ৪-৫ দিন আগে থেকেই বিভিন্ন পরিবহনের অন্তত ২০/২২টি গাড়ি প্রতিদিন ঢাকা ছেড়ে গন্তব্যের পানে ছুটতো। এবার সারাদিনে ৪/৫টি গাড়ীও ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহন কাউন্টারের লোকজন বলছেন, পরিস্থিতি এতোটাই খারাপ যে, তাদের নিজেদের বোনাস দূরের কথা বেতন ভাতা নিয়েও তারা শঙ্কায় আছেন। যাত্রী নিয়ে গাড়ী না চললে মালিকপক্ষ তাদের বেতন ভাতা দেবে কিভাবে সেটাই তাদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের আনন্দ তো দূরের কথা, বাসাভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে থাকাটাও অসম্ভব হয়ে পড়ছে তাদের জন্য।
আজ(২৯) জুলাই রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ এবং সদরঘাট ঘুরে কোথাও নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষের জটলা দেখা যায়নি। অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে সর্বত্র। সকাল ১১টার দিকে গাবতলী টার্মিনালে কথা হয় জীবন নাহারের সঙ্গে। তিনি তার ছেলেকে নিয়ে গাইবান্দার গোবিন্দগঞ্জে নিজ বাড়ীতে যাচ্ছেন পরিবার পরিজনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগভাগি করে উপভোগ করতে। তিনি জানান, অন্যান্য বছর ব্যাপক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে বাড়ি গেলেও এবার টার্মিনালে এসে কোন ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়নি। পূর্বে তিনি টিকিট না কেটে সরাসরি সকালে এসে টিকিট নিয়েছেন। যাত্রীদের কোন চাপ নেই, তাই তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন এবারের যাত্রায়।
একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর মহাখালী, সায়দাবাদ ও সদরঘাটে। যাত্রী শূন্য কেন এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল জব্বার নামে এক বাস কাউন্টারের কর্মচারী জানান, মহামারী করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে বিপুল সংখ্যক লোক চাকরি হারিয়ে অথবা চাকরির অনিশ্চয়তা এবং বেতন না পেয়ে স্বপরিবারে বাসার আসবাবপত্র নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন। এ ধারা এখনও অব্যাহত আছে। প্রতিদিনই স্থায়ীভাবে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ।
শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এ ভয়াবহ মুহুর্তে মানুষের হাতে টাকা নেই। সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া কেউ ভালো নেই। প্রাইভেট বিভিন্ন অফিস আদালতে কর্মরত অনেকেরই চাকরি চলে গেছে অথবা বেতন পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ বেতন পেলেও সেটা নির্ধারিত বেতনের অর্ধেক। ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা চরম কষ্টে আছে। এ অবস্থায় মানুষের মনে ঈদের আনন্দ আগের মতো না থাকাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ভয় তো আছেই।