সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হঠাৎ করে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই সুনামগঞ্জ জেলায় একলাফে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় এ নিত্যপণ্যটি। একদিনের ব্যবধানেই কেজিতে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
গত সোমবার ক্রেতারা ৪০-৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ ক্রয় করলেও বর্তমানে তা ক্রয় করতে হয়েছে ৭০-৭৫ টাকায়। হঠাৎ করেই পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। পেঁয়াজের অতিরিক্ত ঝাঁজে দিশেহারা ক্রেতারা। কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত পেয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
জেলা শহরের বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারী বাজার পরিদর্শন করে দেখা যায়, রাতারাতি প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে পেঁয়াজের দাম।
জানা যায়, পৌরশহরের বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরাবাজারে দু’দিন আগে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি ধরে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজিতে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাজার পরিদর্শনকালে কথা হলে পেঁয়াজ ক্রয় করতে আসা সুলেমান মিয়া বলেন, আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত হঠাৎ করে কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই আমাদের দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার ঘোষণা দেয়ায় রাতারাতি পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল যে পেঁয়াজ ৪০ টাকা ধরে বিক্রি হয়েছে আজ তা ক্রয় করতে হচ্ছে ৭০ টাকায়। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণায় এই হাল। আমরা ভারতীয় পন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী করতে হলে আমদানী নির্ভরতা কমাতে হবে। আমরা বহুবার দেখেছি আমাদের দেশে যখনই পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়। মোক্ষম সময়ে অতিমুনাফা লোভী ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ আমদানীর কারণে পুজি হারিয়ে পথে বসেন আমাদের দেশের কৃষক। দেশের কৃষি বিপ্লবকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য এটা একধরনের চক্রান্ত বলে আমার মনে হয়। দাম দিয়ে ক্রয় করতে হলে আমাদের দেশে উৎপাদিত পন্য ক্রয় করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করাই শ্রেয়।
তালহা মিয়া নামের আরেক ক্রেতা জানান, হঠাৎ করে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। এমনিতেই মহামারী করোনার কবলে পড়ে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। যা জমানো ছিলো এই মহামারীতে সব চলে গেছে পরিবারের ভরন-পোষনের কাজে। এখন এই অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ ক্রয় করা আমাদের জন্য প্রায় দু:সাধ্য।
রিক্সাচালক সুমন মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পিয়াইজের দাম যেভাবে বাড়ের আমরা আর পিয়াইজ কিইন্যা খাইতাম পারতাম না। হারাদিন (সারা দিন) রিশকা (রিকশা) চালাইয়া যে টেকা (টাকা) রোজি করি চাউল-ডাইল কিনতেই সব টেকা (টাকা) ফুরাই যায় (শেষ হয়ে যায়) পিয়াইজ কিনমু কিলা। আমরা যাইমু কোয়াই। পিয়াইজ না খাইয়াই চলা লাগব।’
এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, পেঁয়াজসহ নিত্যপয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে জেলার প্রায় সবগুলো উপজেলাতেই টিসিবি পণ্য বিক্রেতা ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরো ডিলার ও বেশি পণ্য বিক্রির জন্যে টিসিবি কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।