সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বধূকে স্বামীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ সময় ওই বধূ সম্ভ্রম রক্ষায় তাদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করেছিল। কিন্তু মনে দয়া হয়নি ধর্ষকদের। জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে একের পর এক ধর্ষণ করে তারা।
নির্যাতিতা বধূ রোববার সিলেটের আদালতে জবানবন্দিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন। বহুল আলোচিত এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছেন।
নির্যাতিতা বধূ জানান, তাদের বিয়ে হয়েছে কয়েক মাস হবে। এরই মধ্যে স্বামীকে নিয়ে তিনি শুক্রবার বেড়াতে যান এমসি কলেজে। ঘটনার দিন বিকালেই তারা এমসির ক্যাম্পাসে যান। সেখানে স্বামীকে নিয়ে ক্যাম্পাসের নানা জায়গা ঘুরে দেখেন।
ক্যাম্পাস ঘুরে তারা সন্ধ্যার পর পেছন দিক দিয়ে এমসি কলেজ থেকে বের হন। এমন সময় ক্যাম্পাসের পেছনের এলাকায় ধর্ষকরা অবস্থান নিয়েছিল। তারা তাদের দেখতে পেয়ে ঘিরে ধরে। এক পর্যায়ে তারা অস্ত্রের মুখে স্বর্ণের চেইন, টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
যাওয়ার সময় এক ধর্ষক বলে উঠে- দেখ মেয়েটি তো সুন্দর। এ কথা বলার পর অন্যরাও তার দিকে ফিরে তাকায়। এরপর তারা ঘুরে এসে জাপটে ধরে তাকে। এতে প্রতিবাদ করেন সঙ্গে থাকা স্বামী। ধর্ষকরা এ সময় তার স্বামীকে মারধর শুরু করে বধূকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এ সময়ও চিৎকার করছিলেন তিনি। ধর্ষকরা তাকে যখন ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন পিছু পিছু যান স্বামী। তিনি গিয়ে এমসি কলেজের হোস্টেলে ঢোকেন। ধর্ষকরা তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে স্বামী গিয়ে তাদের বাধা দেন। ছাত্রাবাসের ভেতরেই তার স্বামীকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে বেঁধে ফেলে।
নির্যাতিতা বধূ জানান, স্বামীকে বেঁধে তারা তার ওপর নির্যাতন করে। এ সময় তিনি সম্ভ্রম রক্ষার্থে তাদের হাতে-পায়ে ধরেন। কিন্তু এতে মন গলেনি ধর্ষকদের। এ সময় চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। দুইতলা থেকে কয়েকজন যুবক নিচে নামতে চাইছিল। এ সময় তাদের ধমক দিয়ে আটকে দেয়া হয়। পরে পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।
২৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বাবলাকে নিয়ে শাহপরান থানার ওসি ধর্ষিতা বধূ ও তার স্বামীকে এমসির ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে সেখানে আরো কয়েকজন ছাত্রনেতা যান।
উদ্ধারের পর ওই বধূকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ডাক্তারদের বিশেষ টিমের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসা শেষে গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, শাহপরান থানার ওসি ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তাকে সিলেটের আদালতে নিয়ে আসেন।
মহানগর তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলার আদালতে নির্যাতিত ওই বধূ জবানবন্দি দেন। প্রায় ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে নির্যাতিত ওই মহিলাকে পরিবারের জিম্মায় দেয়া হয়েছে।
ওই দিন শুক্রবার ঘটনার খবর পেয়ে এমসির ছাত্রাবাসে ছুটে গিয়েছিলেন সাবেক এক ছাত্রনেতা। তারা গিয়ে নির্যাতিত ওই বধূ ও তার স্বামীকে ছাত্রাবাসে পেয়েছেন। এ সময় সেখানে পুলিশও ছিল। তাদের মুখে বর্ণনা শুনে কারা এসব ঘটনা ঘটিয়েছে এ তথ্য উদ্ঘাটনে সবাই তৎপর হন।
তাৎক্ষণিক ধর্ষিতা ও স্বামীর মুখে বর্ণনা শুনে তারা ধর্ষকদের পরিচয় বের করেন। এ সময় ফেসবুক আইডি থেকে তাদের ছবি বের করা হয়। পরে ধর্ষিতা ও তার স্বামী ওই ধর্ষকদের শনাক্ত করেন।
ঘটনার পর পুলিশ ওই বধূকে উদ্ধার করে সিএনজি অটোরিকশাতে বসিয়ে রাখে। তাৎক্ষণিক শাহপরান থানার ওসিসহ সাবেক ছাত্রনেতারা হোস্টেলে যান। গিয়ে অভিযান চালান। ওই সময় কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবাই ছাত্রাবাস ছেড়ে পালিয়ে যায়।
ওই সময় নির্যাতিত বধূর স্বামী পুলিশকে জানিয়েছিলেন- তারা সদ্য বিবাহিত। তারা বিয়ে করলেও পারিবারিকভাবে এখনো তাদের বিয়ে মেনে নেয়া হয়নি। এ কারণে তারা আলাদা বসবাস করছেন।
স্বামী সৌদি আরবে থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়েছিল। এরপর দেশে আসার পর তাদের বিয়ে হয়। নির্যাতিতার স্বামীর বাড়ি সিলেট শহরতলীর শিববাড়ি এলাকায় ও স্ত্রীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায়।