দেশজুড়ে দিন দিন ধর্ষণ, জেনা-ব্যাভিচার বেড়েই চলছে। সম্প্রতি করোনার চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ধর্ষণ। বাবার সাথে মেয়ে, ভাইয়ের সাথে বোন, স্বামীর সাথে স্ত্রী, কেউ নিরাপদে চলাফেরা করতে পারছে না। রাষ্ট্রীয় আইনে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষ উভয়ের সম্মতিক্রমে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে তা অপরাধ না হলেও পরবর্তীতে মনোমালিন্য ও বিরোধের সৃষ্টি হলে পূর্বের জেনা-ব্যাভিচারের বিষয়ে মামলা থেকে শুরু করে নানা প্রকার সমস্যায় পতিত হয় সংশ্লিষ্টরা। বিবাহ বহির্ভূত ইচ্ছাকৃত শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন রাষ্ট্রীয় আইনে অপরাধ না হলেও ধর্মীয় ভাবে তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও কবিরা গুণাহর অন্তর্ভূক্ত।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীরাই বেশি ধর্ষণের শিকার হয়, যেখানে পুরুষ আবির্ভূত হয় ধর্ষক হিসেবে, নারীরা হয় নির্যাতিতা। শরীরে যৌন অনুভূতি না আসা কিংবা যৌন অনুভূতির বয়স পেরিয়ে বৃদ্ধাবস্থায় পতিত হওয়া মেয়ে শিশু-মহিলারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে নিয়মিত, যেখানে পুরুষের বিকৃত যৌন লালসাই প্রকাশ পায়। ধর্ষণ প্রতিরোধের জন্য রাষ্ট্র-সমাজ কর্তৃক নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও থামছে না ধর্ষণ, পাশাপাশি ধর্ষণের মামলাগুলোতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়ার কারনেও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। ধর্মপ্রাণ মানুষজন ধর্মের বিরুদ্ধে নানা কটুক্তি-কৌতুক কিংবা অপমানজনক কোন কর্মকান্ড দেখলে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করলেও ধর্ষণের মতো বর্বোরোচিত কাজের বিরুদ্ধে নেই কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ, ওয়াজ মাহফিল, অথচ ধর্ষণের বিষবৃক্ষ উৎপাটনে ধর্মপ্রাণ মানুষদের সোচ্ছার ভূমিকার খুব বেশি প্রয়োজন।
নৈতিক অবক্ষয়ের ফলেই বহু পুরুষ পশুতে পরিণত হয়, যাদের দ্বারা ঘটে ধর্ষণের মতো জঘন্য ও অমানবিক ঘটনা, যার শিকারে পরিণত হয়ে সম্ভ্রম হারানো সহ মৃত্যুবরণ করে বহু শিশু-কিশোরী-নারী, এর মাধ্যমে বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা, নষ্ট হচ্ছে বহু নারী-পরিবারের স্বপ্ন। ধর্ষকরা রাষ্ট্রীয় আইনকে তোয়াক্কা না করার পাশাপাশি ধর্মীয় বিধানকেও উড়িয়ে দিয়ে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হন। রাষ্ট্রীয় আইনে ধর্ষণের জন্য ধর্ষণ, জেনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার শাস্তি জাহান্নাম হলেও মানুষরূপী পশুগুলো নিজেদের যৌন লালসা চরিতার্থ করতে হিংস্র বাঘের মতো ঝাপিয়ে পড়েন নারীদের উপর। ইসলামে ধর্ষণ ও জেনা-ব্যাভিচারকে ভিন্ন ভাবে না দেখলেও ধর্ষণের বেলায় শুধুমাত্র একজন শাস্তি পাবে, আর ধর্ষণের শিকার হওয়া জন নির্দোষ, আর নারী পুরুষ বিবাহ বহির্ভূত ভাবে একে অপরের ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলেও দুজনেই সমান অপরাধী হিসেবে গন্য হবে।
ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। মানুষরূপী পশুরা মানছে না সামাজিকতা, মানছেনা রাষ্ট্রীয় আইন, মানছে না ধর্মের বিধান। ভয় পাচ্ছে না রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় আইনের কঠোর শাস্তি। অথচ ধৈর্য্যশীল হয়ে ধর্ষণ, জেনা-ব্যাভিচার পরিহারকারীদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুখ ও শান্তি। পবিত্র কোরআনে এসেছে “ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে, সুরা যুমার, আয়াত ১০। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে “তুমি যদি আল্লাহর ভয়ে কোন কিছু ছেড়ে দাও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন (তিরমিজী)। যে ব্যক্তি তার জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের দায়িত্ব নিবে, আমি তার জান্নাতের দায়িত্ব নিলাম (সহীহ বুখারী-৬৪৭৪। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল (স.) কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, কোন আমল মানুষকে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র। আর তাকে এটাও জিজ্ঞেস করা হল, কোন আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন মুখ ও যৌনাঙ্গ (তিরমিজী ২০০৪)। হাদিস শরীফে আরো এসেছে “যে যুবক কোন যুবতী নারীকে একা পেয়েও আল্লাহর ভয়ে তার ইজ্জতের উপর হামলা করল না, তার জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস (সহীহ বোখারী)।