শনিবার, ২০ এপ্রিল 2024 বাংলার জন্য ক্লিক করুন
  
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|

   উপসম্পাদকীয়
  এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল: লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ ও গৃহীত পদক্ষেপ
  9, October, 2020, 3:23:53:PM

সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গড় মূল্যায়ন করে আগামী ডিসেম্বরে ফলাফল প্রদানের ঘোষণা প্রদান করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। শিক্ষার্থীদের জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিকল্প ছিল না বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী।

আমাদের জীবনে যতগুলো পাবলিক পরীক্ষা রয়েছে, তার মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ও ভিত এখানেই গড়ে ওঠে। এইচএসসি ও সমমানের এই পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় মূলত শিক্ষার্থীর অর্জনটা কোন অবস্থায় আছে সেটি যাচাইয়ের জন্য। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কিংবা ভবিষ্যৎ চাকরি বাজারে এইচএসসির রেজাল্ট কতটা প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে তা সহজেই অনুমেয়। করোনা ভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বাতিল করা হয় এবং এখনো এটি নিয়ন্ত্রণে না আসার দরুন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করল সরকার। পরীক্ষা বাতিলের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কেউ এটিকে দেখছে ইতিবাচক দিক হিসেবে আবার কেউ দেখছে নেতিবাচক হিসেবে।

প্রত্যকে জিনিসের-ই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে।  উচ্চমাধ্যমিকের  পরীক্ষা বাতিলের  ইতিবাচকতা হলো-
প্রথমত- এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের একটা উদ্বেগ, উৎকন্ঠা ও অনিশ্চয়তার অবসান ঘটেছে। কেননা, তারা একটা  দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল যে পরীক্ষা আদৌ হবে?  কি হবে না?  দেশে এখনও করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি। এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থী। এই ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাদের অভিভাবক, শিক্ষক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষাখাতের কর্মকর্তাসহ প্রায় অর্ধকোটি মানুষ দৈনিক পরীক্ষা গ্রহণের কাজে বের হতে হতো। এখানে যদি ১ শতাংশও আক্রান্ত হয়,  তাহলে সংখ্যাটি দাঁড়াবে  প্রায় ৫০ হাজার। সুতারাং সরকার এত বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যবিধি কতটা নিশ্চিত করতে পারতো তা প্রশ্নবিদ্ধ। তাই পরীক্ষার চেয়ে জীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের কাছে বেশি জরুরি। দ্বিতীয়ত- ১৪ লাখ শিক্ষার্থীকেই এবার শতভাগ পাশ করানো হবে। পরীক্ষা হলে নিশ্চয়ই কখনো শতভাগ পাশ হতো না, এদিক দিয়ে যাদের প্রস্তুতি খারাপ ছিল তারা সুবিধা পেয়েছে অর্থাৎ মন্দের ভাল হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের নেতিবাচক দিক বিচার করতে গেলে বলতে হবে, এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের উপর দীর্ঘমেয়াদী একটা প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে রাইজিং শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য ফলাফল থেকে বঞ্চিত হবে। অনেক শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসির তুলনায় প্রস্তুতি বেশ ভাল ছিল। যার ফলাফল হয়ত অনেক ভাল করার কথা ছিল কিন্তু সে সেই সুযোগটি হারালো। এমনও অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক রয়েছে যারা জেএসসি পরীক্ষাকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না। কেননা, এটি বাচ্চাদের জন্য খুবই আরলি এক্সাম। সেক্ষেত্রে এই ফলাফল দিয়ে কিভাবে মূল্যায়ন হবে? তাছাড়া বিভাগ পরিবর্তনের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে। সবমিলিয়ে এদের মূল্যায়ন কতটা ন্যায্য হবে? বলা চলে তা প্রশ্নবিদ্ধ!

লাভ-ক্ষতির হিসাব যতটুকুই হোক না কেন এ সিদ্ধান্তের ফলে আগামীতে যে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং সেগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ও তারিত্ব সিদ্ধান্তও নিতে হবে।  প্রথমত- বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হবে। উচ্চমাধ্যমিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই বুয়েটে কে কে পরীক্ষা দিতে পারবে তা নির্ধারিত হয়। সেক্ষেত্রে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা হারহামেশাই বাড়বে। আর বেশি সংখ্যক পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার সুযোগ ও মূল্যায়ন- দুটি ক্ষেত্রেই বুয়েট কর্তৃপক্ষকে পড়তে হবে নতুন জটিলতায়। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় এইচএসসি ফলাফলের ওপর নির্ধারিত নম্বর থাকে । এবার তাহলে নম্বর বন্টন নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থী যেমন বিপাকে পড়বে তেমনি বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নও উঠতে পারে ।  দ্বিতীয়ত- বিভাগ পরিবর্তন করে যারা ভাল ফলাফলের আশায় অন্য বিভাগে ভর্তি হয়েছে সেক্ষেত্রে তাদের জন্য স্বচ্ছ নীতিমালার মাধ্যমে মূল্যায়ন কতটা সাফল্যমন্ডিত করা যায় তা সুস্পষ্ট করতে হবে। তৃতীয়ত- যেহেতু ইতিহাসে এই প্রথম শতভাগ পাশ করানো হবে সেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাড়বে ব্যাপক হারে । সেক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান ধরে রাখতে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।  চতুর্থত- চাকরি বাজারে ২০২০ ব্যাচের সঠিক মূল্যায়ন হবে তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। পঞ্চমত- বিদেশে উচ্চশিক্ষায় গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীরা যেন হয়নানির স্বীকার না হয় সেদিকেও সুদৃষ্টি দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের যথাযথ মূল্যায়নে জেএসসি ও এসএসসির সাথে কলেজ পর্যায়ের বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল পর্যবেক্ষণে এইচএসসির ফলাফল মূল্যায়ন করা যায় কি না সে বিষয়ে সরকার কে ভেবে দেখতে হবে।  অন্ত্যত এবারের জন্য   বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উচিত হবে স্নাতক পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ সমন্বয়ের নম্বর তুলে দেয়া এবং একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক যে দুচারটি প্রশ্ন থাকে তার পরিমাণ বাড়িয়ে  দেওয়া। এতে করে পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। সুতারাং পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলো অতিক্রম করতে পারলে তা হবে যুগান্তকারী।
মোহম্মদ শাহিন
শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



   শেয়ার করুন
   আপনার মতামত দিন
     উপসম্পাদকীয়
শৃঙ্খলার নিগূঢ় থেকে মুক্তিই প্রত্যাশা
.............................................................................................
প্রসঙ্গ স্বশিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থী
.............................................................................................
অপার সম্ভাবনাময় নদীপথকে যেকোন মূল্যে বাঁচাতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশে রেলপথ বিকাশের ইতিহাস
.............................................................................................
কেন বাংলা টাইপিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না
.............................................................................................
আত্মহত্যা উদ্বেগ করণীয়
.............................................................................................
বিপণনের অভাবে ক্ষতির সম্মুখীন কৃষিখাত
.............................................................................................
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ: তৃণমূল পর্যায়ে সুদের বিস্তৃতি
.............................................................................................
কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পরিবারের দায়িত্বশীলতা দরকার
.............................................................................................
প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা
.............................................................................................
পুঁজিবাদী পশ্চিমা বিশ্ব বনাম সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার দ্বন্দ্ব
.............................................................................................
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় জেল হত্যা ও গ্রেনেড হামলা
.............................................................................................
সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ে উঠুক
.............................................................................................
মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব
.............................................................................................
জিপিএ ফাইভ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর বিসিএসের নামই কি সফলতা!
.............................................................................................
আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্প
.............................................................................................
কেন ভর্তি হবেন ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে
.............................................................................................
বাংলাদেশ ও জ্বালানি তেল
.............................................................................................
বিদ্রোহী কাজী নজরুল
.............................................................................................
চা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও মানবাধিকার প্রদান করতে হবে
.............................................................................................
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : প্রজন্মে প্রজন্মের যাত্রা
.............................................................................................
২১ আগস্ট ১৫ আগস্টেরই ধারাবাহিকতা
.............................................................................................
পারিবারিক ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে: নেপথ্যে কারণ...
.............................................................................................
ভয়াবহ একটি দিবস ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
.............................................................................................
১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস : বাংলাদেশ উন্নত বিনির্মাণের প্রকৃত কারিগর যুবকেরা
.............................................................................................
বৃদ্ধাশ্রম নয় বরং প্রয়োজন সন্তানের ভালোবাসার
.............................................................................................
শত বাঁধা পেরিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে জবি
.............................................................................................
নিরাপদ মাছে ভরবো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ
.............................................................................................
গৌরব, আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের পদ্মা সেতু
.............................................................................................
আত্মহত্যাকে না বলি জীবনকে উপভোগ করতে শিখি
.............................................................................................
আত্মহত্যা নয়, বেঁচে থাকায় জীবন
.............................................................................................
আপোষহীন আবুল মাল মুহিত
.............................................................................................
প্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন ‘কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা’
.............................................................................................
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু
.............................................................................................
জগন্নাথের গর্ব ভাষা শহীদ রফিক
.............................................................................................
ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং সম্ভাব্য প্রস্তুতি
.............................................................................................
দেশকে এগিয়ে নিতে ছিন্নমূল পথশিশুদের পুনর্বাসন করতে হবে
.............................................................................................
বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগ একটি অপরটির পরিপূরক
.............................................................................................
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পূর্বশর্ত স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহন
.............................................................................................
ইউপি নির্বাচন : দলীয় প্রতীক তৃণমূলে দলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে!
.............................................................................................
টিকটক এবং সামাজিক অবক্ষয়
.............................................................................................
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প
.............................................................................................
করোনায় বেকারদের অবস্থা শোচনীয়
.............................................................................................
অবক্ষয়ের নতুন ফাঁদ ‌টিকটক
.............................................................................................
রাষ্ট্র, আইন এবং রোজিনারা
.............................................................................................
পথশিশুরাও মানুষ
.............................................................................................
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও চর উন্নয়ন
.............................................................................................
নির্ভীক পদচারণার ৫০ বছর
.............................................................................................
সর্বত্র জয় হোক বাংলা ভাষার
.............................................................................................
বাঙালির চেতনা ও প্রেরণার প্রতীক একুশে ফেব্রুয়ারি
.............................................................................................

|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
    2015 @ All Right Reserved By dailyswadhinbangla.com

Developed By: Dynamic Solution IT