কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : তারুণ্যদীপ্ত আনতারা মোকারমা আনিকা। কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতি অঙ্গনে পদচারণা ছিল ১৮ বছরের এই তরুণীর। ফেসবুকে তার ভূমিকাও ছিল গানকেন্দ্রিক- ‘আমি গান গাইতে ভালোবাসি, গান দিয়ে জীবনের সব কষ্ট-দুঃখ ভুলতে চাই’। জীবনের কত পথ বাকি ছিল তার। অথচ জ্বলে উঠতেই নিছে গেল তার জীবনপ্রদীপ। ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন আনিকা।

আজ শুক্রবার সকালে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে আন্তঃনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেসের চাকায় কাটা পড়েছে আনতারার শরীর। নিহত আনতারা কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ পানির ট্যাংকি এলাকার মোকাম্মেল হকের মেয়ে।  

স্বজনরা জানান, পারিবারিক প্রয়োজনে মা-খালার সঙ্গে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল আনতারা মোকারমার আনিকার। মা আসমা বেগমকে সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে যখন কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে পৌঁছান, তখন আন্তঃনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস হুইসেল বাজিয়ে ঢাকার উদ্দেশে চলতে শুরু করে।

মাকে নিয়ে ট্রেনটিতে উঠতে দৌড় শুরু করে আনিকা। ট্রেনটির নির্ধারিত কম্পার্টমেন্টের নাগাল পেলেও উঠতে গিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যায় আনিকার দুই পা। মুহূর্তেই আনিকার দেহ ছিন্ন-ভিন্ন হয় ট্রেনের চাকায়।

উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী আনতারা মোকারমা আনিকার এমন মৃত্যুতে কাঁদছেন তার বন্ধু-স্বজনরা।

আনিকা লেখা পড়া আর গানচর্চার জন্য বসবাস করতেন শহরের খরমপট্টি এলাকায়। শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে এ বছর বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল তার। করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ার সরকারি ঘোষণা আসার পর এলএলবিতে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

আনিকার বন্ধুরা জানিয়েছেন, জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম যেখান থেকেই আমন্ত্রণ আসতো, পাগলের মতোই সেখানে ছুটে যেতেন আনতারা মোকারমা আনিকা। অনুষ্ঠান-কনসার্ট মাতাতেন তার দরদী কণ্ঠের গান দিয়ে। নিজের গাওয়া গান দিয়ে সাজিয়েছিলেন একটি ইউটিউব চ্যানেল। এসব কারণে কিশোরগঞ্জের শিল্প-সংস্কৃতিতে আনতারা মোকারমা আনিকা ছিল এক পরিচিত ও প্রিয় নাম।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুর রহমান বিশ্বাস জানান, আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টায় কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনের প্লাটফরম থেকে ঢাকার উদ্দেশে আন্তঃনগর এগারোসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যাচ্ছিল। প্লাটফর্ম অতিক্রম করার মুহূর্তে চলন্ত ট্রেনটিতে মাকে নিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল আনতারা। কিন্তু উঠতে গিয়ে ট্রেনের গতির সাথে তাল মেলাতে না পারায় তার দু’পা ট্রেনের নিচে চলে যায়। এতে তার পুরো শরীর কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

চোখের সামনে মেয়ের এমন মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মা আসমা বেগম। শহরের বত্রিশ পানির ট্যাংকি এলাকার বাসায় লাশ নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজন আর বন্ধুবান্ধবদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। বাদ জুমা নামাজে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

স্বাধীন বাংলা/জ উ আহমাদ