কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: অবশেষে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবা চালুর অনুমতি পেয়েছে কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। বুধবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে। নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবার সুবিধার্থে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্যও পত্রে অনুরোধ করা হয়েছে। নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবা চালুর অনুমতি পাওয়ার ফলে ৫০০ শয্যার এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে জনসাধারণের চিকিৎসা লাভের পথ উন্মুক্ত হলো। এছাড়া প্রশিক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও তাদের ইন্টার্নশীপ নিয়ে তৈরি হওয়া জটিলতা থেকে রেহাই পাচ্ছেন।
বুধবারই ২০১৯ সালে চতুর্থ ব্যাচের পাশ করা ৪৩ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক প্রশিক্ষণের দাবিতে অবস্থান ধর্র্মঘট পালন করেন। তারা হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক ডা. হেলাল উদ্দিনের কক্ষের ফ্লোরে বসে অবস্থান ধর্মঘট পালন করার সময় ডা. হেলাল উদ্দিন, কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সজল কুমার সাহা ও সহকারি পরিচালক ডা. অনুপম ভটাচার্য্য কক্ষে আটকা পড়েন। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকগণ অবস্থান ধর্মঘট পালন করে অবিলম্বে তাদের বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফল না আসলে তারা আগামী শনিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচির পালন করবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছিলেন।
তাদের এই আন্দোলনের মাঝেই হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসা সেবা চালুর অনুমতি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে গত ১২ এপ্রিল শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটিড হাসপাতাল ঘোষণা করায় নন-কভিড চিকিৎসা কার্যক্রম এতদিন বন্ধ ছিল। ২০১৯ সালের ১০ মার্চ পাশ করা ইন্টার চিকিৎসকরা ১৬ মার্চ ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করলেও কোভিড ডেডিকেটেড ঘোষণার পর অধিকাংশ ইন্টার্ন চিকিৎসক কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে চলে যান। পরে কর্তৃপক্ষের কড়া নোটিশের প্রেক্ষিতে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এ অবস্থায় গত আগস্ট মাস থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে হাসপাতালে নন-কোভিড চিকিৎসা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় তারা কোভিড রোগীর চিকিৎসা ছাড়া গাইনী, সার্জারি ও মেডিসিন বিষয়ক শিক্ষা নিতে না পারায় তারা পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসক হতে পারেনি। চার মাসে তাদের ইন্টার্নশীপ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা ইন্টার্ন করতে না পারায় পেশাগত জীবনে পিছিয়ে পড়েছেন।
অন্যদিকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে কোভিড ডেডিকেটেড করায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিশাল এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন জেলাবাসী। জেলা সদরে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থাকলেও সেখানে চিকিৎসক-নার্স সংকটের কারণে এই দীর্ঘসময়ে কার্যত স্বাস্থ্য সেবায় বড় ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছিল। সাধারণ রোগেও মানুষকে চিকিৎসা পেতে দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে।
এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেবার পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালুর অনুমোদন হয়েছে। এখন থেকে কিশোরগঞ্জবাসী শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা পাবে।