আব্দুর রহিম : সরকারি তালিকাভুক্ত মিলাররা (আটাকল মালিক) কাক্সিক্ষত মুনাফা না হওয়ায় গুদাম থেকে গম উত্তোলন করছে না। ফলে বন্ধ রয়েছে ২৩ জেলার ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেলিং) মাধ্যমে আটা বিক্রি। আর তাতে ওসব জেলার প্রায় ২৫ লাখ হতদরিদ্র মানুষ সুলভমূল্যে আটা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) ওএমএসের আটা বিক্রি চালু করতে তালিকাভুক্ত মিলারদের গম উত্তোলন করে আটা সরবরাহের জন্য চিঠি দিয়েছেন। পাশাপাশি আটা সরবরাহ না করার ব্যাখ্যাও জানতে চাওয়া হয়েছে। খাদ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে খোলাবাজারে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে যে মানের আটা পাওয়া যাচ্ছে, প্রায় সমমানের আটা ক্রেতারা খাদ্য অধিদফতরের পরিচালিত ওএমএসের ডিলারের কাছ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে কিনতে পারছেন। কয়েক মাস ধরে ওএমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রি বন্ধ থাকলেও আটার ভোক্তা বেড়েছে। কিন্তু কাক্সিক্ষত মুনাফা না হওয়ার অজুহাতে সরকারি তালিকাভুক্ত মিলাররা এ কার্যক্রম পরিচালনায় অনীহা দেখাচ্ছে। ফলে গরিব মানুষের জন্য সারাদেশে ২২ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রির কার্যক্রম চালু থাকলেও তা প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। অথচ চলতি অর্থবছরেও এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টন গম। গতবছর এর পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ লাখ টন। মাসিক ৪০ হাজার টন গমের বরাদ্দ থাকলেও ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ৪শ’ মিলার মাত্র ৭ হাজার টন সরকারি গম উত্তোলন করেছে। সূত্র আরো জানায়, বিগত জুন মাসে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম নিয়ে হৈ-চৈয়ের পর সরকারি তালিকাভুক্ত মিলাররা জুলাইয়ে ২১ হাজার এবং আগস্টে মাত্র ২০ হাজার টন গম উত্তোলন করেছেন। এ পরিস্থিতিতে বরাদ্দ থাকার পরও কেন ডিলাররা সরকারি গম উত্তোলন করছেন না কাছে তা জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন রাঙ্গামাটি, বরগুনা, খুলনা, পিরোজপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, নরসিংদীসহ ২৩টি জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা। কিন্তু একদিকে ব্রাজিলের গম আতঙ্ক, অন্যদিকে খুচরা বাজারের সাথে মূল্য পার্থক্য। এসব মিলেই মিলাররা গম তুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। মিলারদের মতে- সরকারি গুদাম থেকে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা উত্তোলন করতে মিলারদের খরচ হয় প্রায় এক হাজার ৫০ টাকা। আর একই বস্তা খোলাবাজারে পাওয়া যাচ্ছে এক হাজার টাকা বা এক হাজার ১০ টাকায়। এমন পরিস্থিতিতে মিলাররা কেন লোকসান দিয়ে সরকারি গুদাম থেকে গম কিনবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তাছাড়া শুল্কমুক্ত ভারতীয় চালের আগ্রাসনে খাদ্য বিভাগ একদিকে যেমন ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষের কাছে সরকারি চাল বিক্রি করতে পারছে না, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সরকারি গমের মূল্য সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় আটা বিক্রি কার্যক্রমও ভেস্তে যাচ্ছে। এ কারণেই বেকায়দায় পড়েছে প্রায় ৫০ লাখ নিুআয়ের মানুষ। যারা সরাসরি এর ভোক্তা। তারা খুচরা বাজার থেকে কম দামে চাল কিনতে পারলেও কেজিপ্রতি ৭-৮ টাকা বেশি দিয়ে আটা কিনতে হচ্ছে। সরকারি গুদাম থেকে গম উত্তোলন না করা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফাওয়ার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশিদ বলেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম খাওয়ার অনুপযোগী নয়। কিন্তু এ নিয়ে দেশবাপী তোলপাড় হওয়ায় জনমনে ভীতি কাটেনি। এ কারণে সরকারি তালিকাভুক্ত ডিলারদের কেউ কেউ ওই গম উত্তোলনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাছাড়া খুচরা বাজারে সরকারি গমের চেয়ে ভালোমানের গম মণপ্রতি প্রায় ৯০ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সঙ্গতি রেখে মূল্য পুননির্ধারণের আবেদন করা হয়েছে। যদিও সে আবেদন এখনো বিবেচনায় আনা হয়নি। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানান, ওএমএসের গমের মূল্যের বিষয়ে মিলারদের মধ্যে আপত্তি রয়েছে বলে শুনেছি। ঈদের পর এসব বিষয় নিয়ে বৈঠক করা হবে। সেখানে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। কারণ সরকারি উদ্যোগে আটা বিক্রির কার্যকম জোরেশোরেই চালানো হবে। দরিদ্রবান্ধব এ কার্যক্রমে গতি আনতে সব ধরনের সমস্যা দূর করা হবে।