স্বাধীন বাংলা ডেস্ক: বরাবরই নানাবিধ কারণে পোল্ট্রি খামারিরা চাপের মুখে। তার উপর আবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে বার্ডফ্লু। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বার্ডফ্লুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। একদিকে যেমন হাজার হাজার মুরগি মারা যাচ্ছে অন্যদিকে কমে যাচ্ছে ডিমের উৎপাদন। আর এ কারণেই সারাদেশে বেড়ে গেছে ডিমের দাম। একটি মুরগি প্রতিদিন একটি করে ডিম দেয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এক দু’ দিন কখনও আবার তিন চার দিন পর পর মুরগি ডিম পাড়ছে। এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে এবং এগুলো প্রতিকারের ব্যবস্থাও আছে। পোল্ট্রি খামারিরা যাতে লাভবান হতে পারেন সে জন্য নিম্নে কারণগুলো উল্লেখ করে তার প্রতিকার দেয়া হল-
কারণ: হঠাৎ অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা পড়লে মুরগির দেহের তাপমাত্রার সাথে সমন্বয় হয় না। অথবা দিনে গরম রাতে শীত পড়লেও সমন্বয় হয় না। মুরগির প্রজননতন্ত্রে ডিমের গঠন হতে ২৩ ঘণ্টা সময় লাগে। তাপমাত্রা দ্রুত পরিবর্তন হলে ডিমের গঠন খুব ধীর গতিতে হয়।
প্রতিকার: খামারের থার্মোমিটার দেখে দিন ও রাতে একই তাপমাত্রার (২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ব্যবস্থা করা। তাপমাত্রা বেশি হলে ভিটামিন সি খাওয়াতে হবে।
কারণ: সুষম খাদ্যের অভাব হলে ডিম উতৎপাদন কমে যায়।
প্রতিকার: নিয়মিত সুষম খাদ্য খাওয়ানো। ১৮ থেকে ৭২ সপ্তাহের ডিম পাড়া মুরগির সুষম খাদ্য হচ্ছে- গম ভাজ ৫৪ শতাংশ, গমের ভূষি ৫ শতাংশ, চালের কুঁড়া ১৫ শতাংশ, তিলের খৈল ৭ শতাংশ, শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১০ শতাংশ, সয়াবিন ভাজ ২ শতাংশ। এগুলো একসাথে মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করে মুরগিকে খাওয়াতে হবে।
কারণ: হঠাৎ করে মুরগির খাদ্যের উপকরণ পরিবর্তন করলে।
প্রতিকার: মুরগির বয়স ১৭ সপ্তাহ থেকে খাদ্যের উপকরণ একই রাখতে হবে।
কারণ: হঠাৎ করে খাদ্য সরবরাহের সময় এবং পরিমাণ পরিবর্তন করলে ডিম উৎপাদন কমে যায়।
প্রতিকার: প্রতিদিন একই সময়ে খাদ্য দিতে হবে। খাদ্যপাত্রে সবসময় খাদ্য রাখতে হবে।
কারণ: পর্যাপ্ত পানির অভাব হলে।
প্রতিকার: পানির পাত্রে সবসময় বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে। ২০ সপ্তাহের ১০০টি লেয়ারের জন্য ৩ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন।
কারণ: দেহে ডিম উৎপাদনকারী হরমোনের অভাব হলে।
প্রতিকার: ডিম উৎপাদনকারী হরমোন প্রয়োগ করতে হবে।
কারণ: মুরগি অসুস্থ হলে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হয়।
প্রতিকার: রোগ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন দিতে হবে। রোগ হলে পৃথক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে হবে।
কারণ: মুরগির ঘরে পর্যাপ্ত আলোর অভাব হলে।
প্রতিকার: ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লেয়ারের ঘরে বয়সভেদে কমপক্ষে ১৬ ঘণ্টার বেশি আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
কারণ: অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুরগি পালন করলে।
প্রতিকার: প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। মাঝে মাঝে লিটার পরিবর্তন করতে হবে।
কারণ: হঠাৎ করে মুরগির থাকার স্থান পরিবর্তন হলে।
প্রতিকার: মুরগির বয়স ১৮ সপ্তাহ থেকে থাকার স্থান পরিবর্তন করা যাবে না।
কারণ: মুরগির বয়স বেশি হলে। মুরগির বয়স ৩০ থেকে ৬০ সপ্তাহ পর্যন্ত ডিম বেশি দেয়। এরপর থেকে কমতে থাকে। প্রতিকার: নেই।
কারণ: মুরগি ভয় পেলে হরমোনের ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ডিম উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
প্রতিকার: মুরগি যাতে ভয় না পায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কারণ: মুরগির পালক বদলের সময় ডিম কম পাড়ে। প্রতিকার: নেই।
কারণ: বিভিন্ন বয়সের লেয়ার একসাথে পালন করলে।
প্রতিকার: বিভিন্ন বয়সের লেয়ার আলাদা আলাদা পালন করতে হবে।
কারণ: বিভিন্ন জাতের লেয়ার একসাথে পালন করলে।
প্রতিকার: বিভিন্ন জাতের লেয়ার আলাদা আলাদা পালন করতে হবে।
ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খামারিকে অবশ্যই খামারের যথাযথ যতœ নিতে হবে। পাশাপাশি বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির প্রিমিক্স, ভিটামিন, হরমোন, খনিজমিশ্রণ, ওষুধ পাওয়া যায়। তবে এগুলো অবশ্যই জেলা অথবা উপজেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ অনুসারে খাওয়াতে হবে। এছাড়া উপরের নিয়মগুলো মেনে চললে মুরগি নিয়মিত ডিম পাড়বে।