এমপির নির্যাতনের শিকার, স্কুলে যাওয়ার আকুতি শিশু রাফিদের
ডেস্ক রিপোর্ট : এমপির বিরাগভাজন হয়ে নানা ভাবে নির্যাতন ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে একটি পরিবার। এমনকী চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীকেও এর শিকার হতে হয়েছে। শিক্ষার্থীর বাবার সঙ্গে বেরোধের কারণে স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণির ওই শিশুকে টিসি দিতে বাধ্য করা হয়েছে স্কুল শিক্ষকদের। এমন পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মুতাসিম মাহির রাফিদের আকুতি, ‘স্যার, আমাকে স্কুলে ভর্তির সুযোগ করে দিন। আমি স্কুলে পড়তে চাই। স্কুলছাড়া আমার ভাল লাগে না। এমপি স্যারকে বলে আপনারা আমাকে যেকোনো স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিন।’
ময়মনসিংহের গৌরীপুর আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকিরের অনুমতি ছাড়া বাবার বদলীর আদেশপ্রাপ্তির অপরাধে বলির পাঁঠা হতে হচ্ছে অবুঝ শিশু রাফিদকে।
বিনা অপরাধে শুধুমাত্র এমপির নির্দেশে একদিকে স্কুল থেকে টিসি (ছাড়পত্র) প্রদান, অন্যদিকে পৌর এলাকার কোনো স্কুলে ভর্তির সুযোগ না দেওয়ায় গত তিন মাস ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরছে শিশুটির পরিবার। বাবা উপজেলার ধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম মাজহারুল আনোয়ার। এমপির ডিও বা অনুমতি না নিয়ে বদলীর আদেশপ্রাপ্ত হওয়ার পর রোষানলে পড়ে পরিবারটি। এমপির ‘এইট্টি’ বাহিনীর সদস্যদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হয় বাবা মাজহারুল আনোয়ারকে। শুধু তাই নয়, মা পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোজী সুলতানাকেও চাকরিচ্যুত করার হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে মামলাও।
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে গৌরীপুর আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুজিবুর রহমান ফকির এবং তার ‘এইট্টি’ বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে এবং সন্তানের লেখাপড়া নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। গৌরীপুর উপজেলার ধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাজহারুল আনোয়ার ও স্ত্রী পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোজী সুলতানা এ আকুতি জানান। শিশু রাফিদও এ সময় তাকে স্কুলে পড়ার সুযোগ দিতে আকুতি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা মাজহারুল আনোয়ার বলেন, ‘আমি ডিও লেটার না নিয়ে গত ৩১ মার্চ পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর আদেশপ্রাপ্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এমপি ডা. ক্যাপ্টেন (অব) মজিবুর রহমান ফকির। এরপর আমাকে স্কুল থেকে ধরে আনার জন্য ৪০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে ১৬ এপ্রিল এমপির এপিএস সাহাবুলের নেতৃত্বে পেটুয়া বাহিনী পাঠায়। তারা আমার একমাত্র সন্তান গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী মুতাসিম মাহির রাফিদকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার জন্য স্কুল কমিটির সভাপতি ম. নুরুল ইসলামকে নির্দেশ দেয় এবং রাফিদ স্কুলে এলে দুই পা ভেঙে দিতে বলে। এ সব শুনে রাফিদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেই।’
মাজহারুল আনোয়ার ও স্ত্রী রোজী সুলতানা বলেন, অপরাধ করলে আমাদের শাস্তি দেওয়া হোক, কেন আমাদের মেধাবী সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ হবে? সে কেন পৌর এলাকার কোনো স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না, স্কুলে যেতে পারবে না?
‘গত তিন মাস ধরে রাফিদের পড়াশোনা বন্ধ, দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষাও দিতে পারেনি সে। তাই আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়টি অবহিত করতে চাই’ যোগ করেন মা-বাবা। সন্তানের পড়াশোনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে মাজহারুল আনোয়ার ক্রন্দনরত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আহাম্মদ হোসেনসহ স্থানীয়দের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোথাও সমাধান পাইনি। ৫ জুন আমাকে এমপির নির্দেশে শ্যামগঞ্জ এলাকা থেকে পেটোয়া বাহিনীর সদস্য লিটন, বিপ্লব ও ফারুকের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে কলতাপাড়া ‘সেবালয়’-এ নিয়ে আসা হয়। সেখানে চার ঘণ্টা বাথরুমে আটকে রেখে অমানবিক অত্যাচার করা হয়। পরে আমাকে সমিতির কার্যালয়ে নিয়ে এমপি নিজেই মারধর করেন। এরপর এমপি তার বঙ্গবন্ধু চত্বরের কার্যালয়ের জন্য দু’টি এসি দাবি করলে রাজি হই এবং বেতন পেয়ে ৭ জুলাই দু’টি এসি তুলে দেই সাংগঠনিক সম্পাদক কালাম ও বিপ্লবের হাতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২২ জুলাই ছেলের ভর্তি অনুমতি ও আটকে রাখা মোটরসাইকেলটি চাইলে এমপি আবারও ক্ষুব্ধ হয়ে কলতাপাড়া সেবালয়ে আমাকে আটকে রাখেন। পরে ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আমাকে উদ্ধার করেন। এমপির নির্দেশে পেটোয়া বাহিনীর সদস্যরা আমার হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকি প্রদান করছে। এ অবস্থায় সমাজের বিভিন্ন স্তরে সহযোগিতার আশ্বাস না পেয়ে বাধ্য হই এমপির বিরুদ্ধে মামলা দিতে।’
ওই ঘটনায় মাজহারুল আনোয়ার বাদী হয়ে ৫ আগস্ট এমপির পেটোয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ দু’জনকে আটক করে।
গৌরীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোরশেদুল হাসান খান মামলা প্রসঙ্গে জানান, মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।