আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিটের প্রথম চালান গেল ত্রিপুরায়
23, July, 2020, 11:37:52:AM
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: ভারতের কোলকাতা থেকে চট্টগ্রাম নৌবন্দর ও বাংলাদেশের মহাসড়ক ব্যবহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ট্রানজিট পণ্যের প্রথম চালান গেল ভারতের ত্রিপুরায়। পরীক্ষামূলক ট্রানজিট প্রক্রিয়ায় প্রথমবারের মত আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে রড ও ডাল নিয়ে ৪টি টেইলর স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।
পরে সকাল ১০টায় আগরতলা স্থলবন্দরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ভারতীয় পণ্যের চালান আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন।
এই পণ্যের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও লজিস্টিকস মো: আক্তার হোসেন জানান, আজ প্রথম চালানে ৫৩.২৫ মেট্রিক টন রড ও ৪৯.৮৩ মেট্রিক টন ডাল নিয়ে ৪টি কন্টেইনার গেল ভারতে। পণ্য প্রবেশের পর বন্দরের ভারত অংশে ত্রিপুরারাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব আনুষ্ঠানিকভাবে তা উদ্বোধন করেন। ডালের কন্টেইনার গ্রহণ করেছে ভারতের গৌহাটির প্রতিষ্ঠান ইটিসি অ্যাগ্রো প্রসেসিং ও রড গ্রহণ করেছে আগরতলার এস এম কর্পোরেশন লিমিটেড। বাংলাদেশের ম্যাংগু লাইন নামে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারত খেকে এই পণ্য পাঠিয়েছে ডার্সেল নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
চারটি ট্রলারে কলকাতা থেকে আনা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে চারটি কনটেইনারে ত্রিপুরার জন্য টিএমটি বার (রড) ৫৩.২৫ টন এবং আসামের করিমগঞ্জের জন্য ৪৯.৮৩ টন ডালভর্তি ছিল।
এরআগে গত ১৪ জুলাই কোলকাতা থেকে ‘সেজুতি’ নামে একটি জাহাজ এই মাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল। মঙ্গলবার সকাল ১১টায় জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। বুধবার বিকালে ৪টি ট্রেলারে করে চারটি কন্টেইনার ভর্তি ভারতীয় পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর আসে।
আখাউড়া স্থলবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের নৌ-প্রটোকল ট্রান্সশিপমেন্ট ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ (পিআইডব্লিউটিটি) চুক্তির আওতায় প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম নৌ-বন্দর ব্যবহার করে। আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহন করেছে ভারত।
কুমিল্লা কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার কাজী ইরাজ ইসতিয়াক জানান, এই ট্রানজিট পণ্য থেকে শুল্ক আদায় হয়নি তবে ডকুমেন্ট প্রসেসিং, ট্রান্সশিপমেন্ট, সিকিউরিটি, অ্যাসকট, বিবিধ প্রশাসনিক চার্জ মিলিয়ে এই পণ্য থেকে ৪২ হাজার টাকা মাসুল আদায় হয়েছে।
উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্যা ইউজ অফ চট্টগ্রাম অ্যান্ড মংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তির আওতায় আর্টিক্যাল টু (অনুচ্ছেদ দুই) অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ি এসব পণ্য বাংলাদেশের উপর দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ভারত। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়িদের সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য ভর্তি ট্রেলার সড়কপথে আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দর হয়ে ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে পৌঁছাবে। এতে কলকাতা থেকে ত্রিপুরা ও আসাম রাজ্যে ভারতীয় পণ্য পৌঁছাতে সময় ও খরচ কম লাগবে। তবে এই রুটটি নিয়মিত করতে প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে পরিবহনে কী কী সমস্যা হয় সেগুলো চিহ্নিত করে সংশোধনের পর নিয়মিত রুট হিসাবে চালু হবে।
আগরতলা স্থলবন্দর কাস্টমস সুপারিন্টেনডেন্ট জয়দ্বীপ মুখার্জি নোম্যান্সল্যান্ডে (শূণ্যরেখা) জানান, এই পণ্য পরিবহনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের এক নবদিগন্তের সূচনা হলো। এতে একদিকে যেমন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহন দ্রুত হবে, তেমনি দুই দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর্থিক দিক দিয়ে দুই দেশেই লাভবান হবে।