ক্রীড়া ডেস্ক : উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে নিয়ে রীতিমতো ছেলে খেলায় মেতে উঠলো বায়ার্ন মিউনিখ। একে একে গুণে গুণে কাতালানদের জালে ৮টি গোল দিলো জার্মানির ক্লাবটি। মেসি-সুয়ারেজদের ৮-২ গোলের বন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে বায়ার্ন মিউনিখ।
ম্যাচের প্রথমার্ধেই গোল হয়েছে মোট ৫টি। পরের অর্ধে ৫টি। মোট ১০টি। এর মধ্যে ৯টিই দিয়েছে বায়ার্ন মিউনিখ। কিন্তু ম্যাচের স্কোরলাইন ৮-২। একটি গোল বায়ার্ন নিজেদের জালে যদি না জড়াতো, তাহলে বার্সার ভাগে গোলের পাল্লা থাকতো মাত্র একটি। যেটি এসেছিল লুইস সুয়ারেজের পা থেকে।
ম্যাচটিকে সবাই ধরে নিয়েছিল, ফাইনালের আগে আরেক ফাইনাল হিসেবে। বার্সেলোনা এবং বায়ার্ন মিউনিখের খেলা বলে কথা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তো হবেই!
কিন্তু মাঠের খেলায় বার্সাকে খুঁজে পাওয়াই ছিল কঠিন। লিওনেল মেসিরা মাঠে নেমেছিলেন যেন শুধু বায়ার্নের আক্রমণ ঠেকানোর জন্যই। আগের ম্যাচে নাপোলির বিপক্ষে দারুণ ফুটবল খেলা বার্সেলোনার জন্য যেন ছিল দুঃস্বপ্নের রাত। বায়ার্নের গতি আর কৌশলের কাছে অসহায় ছিলো বার্সা। লিওনেল মেসি দাঁড়িয়ে থেকে শুধু দেখেছেন দলের ডিফেন্সের করুণ পরিনতি।
পর্তুগালের লিবসনে ম্যাচের শুরুটা হয়েছিলো দুর্দান্ত। চার মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় বায়ার্ন। লেভানডস্কির কাছ থেকে পাওয়া বল মুলারের বাম পায়ের শট বার্সা গোলরক্ষক টার স্টেগানকে পরাস্ত করলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় জার্মান পাওয়ার হাউজ।
তবে এই লিড বেশিক্ষণ স্থাযী হয়নি। ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই সমতায় ফেরে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। তবে এতে বায়ার্নের অবদান বেশি। বার্সার আক্রমণ রুখতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল পাঠান বায়ার্নের দাভিদ আলাভা। আত্মঘাতী গোলে বার্সা ১-১ সমতায় ফেরে।
ম্যাচের নবম মিনিটে লুইজ সুয়ারেজ গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে বার্সা এগিয়ে যেতে পারতো। পরে মিনিটেই বার্সার আরও একটি আক্রমণ বিফলে যায়। বল গোলবারে লেগে ফিরে আসে।
তবে এরপর পর ম্যাচের চিত্রটা পাল্টে যায় মুহূর্তেই। বায়ার্নের গতিময় ফুটবলের কাছে বার্সার রক্ষণ হয়ে যায় পাড়ার ফুটবলের মতো। ২১-৩১ এই ১০ মিনিটের ঝড়েই নষ্ট হয়ে যায় বার্সার সেমিফাইনালের স্বপ্ন।
২০তম মিনিটে বল পায়ে ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। কিন্তু নয়ার বরাবর শট নিয়ে হাতছাড়া করেন সুযোগ। এরপর বলতে গেলে বার্সাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি, শুরু হয় বায়ার্নের একাধিপত্য।
২২তম মিনিটে আবার এগিয়ে যায় বায়ার্ন। জিনাব্রির কাছ থেকে বল পাওয়া পেরিসিচকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যায়নি বার্সেলোনার কেউ। যথেষ্ট সময় পেয়ে বুলেট গতির কোনাকুনি শট নেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার, বল মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের বুটে লেগে জালে জড়ায়।
২৪ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলো বায়ার্ন। বার্সা গোলরক্ষক স্টেগানের কল্যাণে রক্ষা পায় বার্সা। ২৬ মিনিটে আরও একটি সহজ গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন লেভানদস্কি। বার্সার রক্ষণের ভুলে পেনাল্টি বক্সের ভেতরে বল পেয়ে যান এই পোলিশ স্ট্রাইকার। তার বাম পায়ের নেওয়া শটটি কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন স্টেগান।
২৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বায়ার্ন। পেনাল্টি বক্সের ডান দিকে থেকে গোরেস্কার বাড়ানো বল খিপ্রগতিতে বার্সা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ডান পায়ের টোকায় বল জালে পাঠান জিনাব্রি।
৩১ মিনিটে চতুর্থ সাফল্য পায় বায়ার্ন। কিমিচের কাছ থেকে বল পেয়ে পেনাল্টি বক্সে খানিক ভেতর থেকে ডান পায়ের শটে বল জালে জড়ান মুলার। প্রধমার্ধেই ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন মিউনিখ।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে এর আগে কখনও কোনো দল এতো আগে চার গোল হজম করেনি। প্রতিযোগিতাটিতে এই প্রথম বিরতিতে যাওয়ার আগে চারবার বল গেল বার্সেলোনার জালে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান বাড়ানোর দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট করে বায়ার্ন। অন্যদিকে, ৫৭তম মিনিটে নিজেদের প্রথম সুযোগে ব্যবধান কমায় বার্সেলোনা। জর্দি আলবার কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ দক্ষতায় বায়ার্ন ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করে নিচু শটে জাল খুঁজে নেন সুয়ারেস।
খানিক পর আবার ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বায়ার্ন। নেলসন সেমেদোকে এড়িয়ে আলফানসো ডেভিস বাইলাইন থেকে কাট ব্যাক করলে ছুটে গিয়ে জাল খুঁজে নেন কিমিচ।
ম্যাচের ৮২ থেকে ৮৯ মিনিটে আরও তিন গোল হজম করতে হয় বার্সাকে। ৮২ মিনিটে দলের হয়ে গোল করেন সবচেয়ে আলোয় থাকা বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডভস্কি। আর ঘরের শত্রু বিভীষিকা হয়ে বার্সার কফিনে শেষ পেরেক দুটি ম্যাচের ৮৫ ও ৮৯ মিনিটে ঠোকেন ফিলিপে কুতিনহো। বার্সেলোনা থেকে জার্মান দলটিতে ধারে খেলা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার উদযাপন করেননি গোল।
সেমিফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের প্রতিপক্ষ চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালের জয়ী দল ম্যানচেস্টার সিটি অথবা অলিম্পিক লিঁও।