মাদকাসক্তি বাংলাদেশে এখন অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এটি জাতির পঙ্গুত্বের খুব বড় একটা কারণ। সাধারণত ১৫ থেকে ৩৫ বছরের বয়সের উপস্থিতি ৭০ ভাগ। আর মাদক গ্রহণের গড় বয়স ২২। এক পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকার মতো মাদকের পেছনে ব্যয় হয়। এই টাকার বেশিরভাগ অংশ চলে যায় ভারতে। কারণ ফেনসিডিল কিংবা ইয়াবা এ দেশে উৎপাদিত হয় না। ফেনসিডিল ভারত থেকে এবং ইয়াবা মিয়ানমার থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আসে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী দেশ ভারত ও মিায়ানমার হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট চক্র বড় জায়গা করে নিয়েছে। সরকারের মাদকবিরোধী লড়াই সত্ত্বেও থেমে নেই মাদক ব্যবসা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া অবস্থানে পাচারকারীরা পাচারের কৌশল পাল্টে চালাচ্ছে মাদক ব্যবসা। আফসোসের বিষয যে, নেশার কবলে লাখ লাখ তরুণ তাদের সম্ভবনাময় ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে ধ্বংসের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। তারা কর্মশক্তি, মেধা ও সৃজনশীলতাকে হারিয়ে ফেলে ভয়ঙ্কর ফাঁদে পা ফেলছে। পুরুষদের মাঝে মাদক গ্রহণের প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও এখন নারীরাও পিছিয়ে নেই।
মাদক কেনার টাকা না পেয়ে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে খুন হচ্ছেন বাবা-মা। ভাইয়ের হাতে খুন হচ্ছেন ভাই বা বোন। টাকা না পেয়ে মায়ের অলংকার চুরি করে তা বিক্রি করে দিচ্ছে মাদকাসক্ত ছেলে। কেউ কেউ চাঁদাবাজি বা ছিনতাই করছে। আবার কেউ করছে শিশু অপহরণ। মুক্তিপণের টাকা দিয়ে মাদক কিনবে। এভাবে মাদকের কারণে তরুণেরা বিপথগামী হচ্ছে। মাদক ব্যবসা ও সেবনকে কেন্দ্র করে ডাকাতি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনাও ঘটছে। প্রতিদিনের পত্রিকা খুললেই এসব চোখে পড়ে।
বাংলাদেশে প্রকাশ্যে ধূমপান চলে, বড় বড় রেস্টুরেন্টে পার্টিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন ছাড়াও অন্যান্য অনৈতিক কাজ চলে, সেগুলোর বিরুদ্ধে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিবেন বলে জানিয়েছেন। সেইসাথে রয়েছে পুলিশের তৎপরতা। এত কিছুর পরও মাদকের আগ্রাসন কমছে না। মাদকদ্রব্যের বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে অনেক অঘটন এড়ানো যেত।
মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই রাষ্ট্রের। তবে শুধু রাষ্ট্রকে দোষারোপ করলে চলবে না। এর পেছনে পরিবার ও সমাজ অনেকখানি দায়ী। বাবা-মা সন্তানদের প্রতি প্রকৃত অর্থে দায়িত্বশীল হলে তারা মাদকে আসক্ত হতে পারে না। সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের উদাসীনতা তাদের মাদকের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এছাড়া সামাজিক বৈষম্যের কারণে অনেক তরুণ, যুবক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মাদক থেকে এর মুক্তি খোঁজে। গডফাদাররা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় গা ঢাকা দেওয়ার ফুরসত পায়। তাই আইনি সমস্যায় পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে, তাদের পেছনে লাগলেও প্রমাণ পাওয়া যায় না। গডফাদারদের কথা সরকার জানে। তাদের হয় শাস্তি দিতে হবে অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
কাজেই রাষ্ট্রের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকেও সচেতন হতে হবে। সন্তানের গতিবিধি এবং বন্ধুবান্ধবের খোঁজ খবর রাখতে হবে। সন্তান যে জায়গাগুলোতে সব সময় যাওয়া আসা করে সেই জায়গাতে খোঁজ খবর নিতে হবে। তার সাথে আচরণ করতে হবে বন্ধুর মতো যেন বাহিরে কোনো সমস্যা হলে সে নিজের থেকেই পরিবারের সাথে শেয়ার করে। সন্তানদের সামাজিক, মানসিক, লেখাপড়া সংক্রান্ত অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো যথাসম্ভব মেটাতে হবে, তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিয়ে তাদের প্রত্যাশা বাড়তে দেয়া যাবে না। মাদকমুক্ত সমাজ জাতিকে এক সুন্দর ভবিষ্যৎ দিবে। তাই আসুন সবখানে সব অবস্থায় মাদককে না বলি। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে সমাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করি।
লেখক : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়