সিলেট ব্যুরো: সিলেটের জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল ও রাতারগুলের মতো আরেকটি অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট মূলাগুলের লোভাছড়া। চারদিক নদী-নালা, খালবিল ও উচুঁ-নীচু টিলাবেষ্টিত এ জনপদটি। এটি যেন একটি দ্বীপ। পাথর কোয়ারী ও বালুমহাল সমৃদ্ধ কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এ জনপদটির উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে লোভানদী ও দক্ষিণ-পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সুরমা নদী। এছাড়াও দেশই, কালিজুড়ি ও নুন নদীসহ অসংখ্য ছোট ছোট নদী-নালা এ অঞ্চলের বুক চিরে বয়ে গেছে। লোভা নদীর উপর কোন ব্রীজ না থাকায় উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি কোন ধরণের সড়ক যোগাযোগ নেই। বর্ষায় নৌকা ও শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া নদী পারাপারের জন্য বাঁশের সাঁকো ও ছোট কাঠের নৌকাই এ অঞ্চলের জনপদের একমাত্র ভরসা। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদেরকে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,এ অঞ্চল ও আশপাশের ইউনিয়নের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে লোভা নদীর উপর একটি ব্রীজ নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। এ ব্রীজটি বাস্তবায়ন হলে মূলাগুল ও আশপাশের এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রার মান বদলে যাবে। জনগণের এ দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে ২০১৯ সালে ৭ জুন স্থানীয় একটি অনুষ্ঠানে সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার লোভানদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পরই তাৎক্ষনিক তিনি মূলাগুল অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে হাফিজ মজুমদার শিক্ষা ট্রাষ্টের ভবনে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।এরপরই গত মার্চ মাসে এলজিইডি’র প্রকল্প পরিচালক (ব্রিজ নির্মাণ) মোঃ এবাদ আলী ব্রিজ নির্মাণের স্থান পরিদর্শন করেন এবং মাটি পরীক্ষার যাবতীয় নমুনা সংগ্রহ করেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণ একটি বড় প্রজেক্ট। এ ধরণের প্রজেক্ট শুরু করতে একটু দেরী হবে। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। লোভায় ব্রিজ নির্মাণে খোঁজ-খবর নেওয়ার দায়িত্বে থাকা সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ পলাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্রিজটি নির্মাণের মাধ্যমে উপজেলা সদর সহ সারাদেশের সাথে সেতুবন্ধন তৈরী হবে এ অঞ্চলের মানুষের। ব্রিজটি যত দ্রুত নির্মাণ করা যায়, সেই প্রক্রিয়া মাথায় নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দিক নির্দেশনায় কাজ চলছে। এলাকাবাসীর পক্ষে সাবেক চেয়ারম্যান শমসের আলম বলেন, এই ব্রিজটি নির্মাণ হলে মূলাগুল সহ আশপাশের লক্ষাধিক মানুষের জীবন-যাত্রার মান বদলে যাবে। চলতি শুকনো মৌসুমেই ব্রীজের কাজ শুরু করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য যে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশ সীমানার ভিতরে সবুজে মোড়া উঁচু টিলার একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে স্বচ্ছ জলের নদী। উঁচু-নীচু টিলার উপর দাঁড়ালেই হাতছানী দেয় মেঘ-পাহাড়। এমনি একটি স্থান হলো- অপার সম্ভাবনাময়ী পর্যটন স্পট হল মূলাগুল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসেন লোভাছড়ায়। এখানকার ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ ও বাংলো ঘর হলো মূল আর্কষণ।
প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মূলাগুলে রয়েছে পাথর কোয়ারী, বালুমহাল, জলমহাল, প্রায় তিনশত বছরের পুরনো জনবসতি, ছোট-বড় পাহাড়, উঁচু-নিচু টিলা, পাহাড়ী ঝর্ণা, ঝর্ণার উপর ঝুলন্ত সেতু, চা-বাগান, দু’পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা নুড়ি পাথরের রাস্তা, প্রায় দু’শ বছরের পুরনো বটবৃক্ষ, সামাজিক বনায়নের সাঁরি সাঁরি গাছ ও পাহাড়ী ছোট ছোট নদীগুলো এ এলাকাকে পর্যটন শিল্পের উপযোগী করে গড়ে তুলেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে কারণেই পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। পর্যটকদের কাছে লোভাছড়া প্রকৃতির রূপ কন্যা বলে পরিচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটক ও এখানকার অধিবাসীরা শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে ও বর্ষায় নৌকায় চলাচল করেন বলে জানা যায়। মূলাগুল অঞ্চলের মূল পর্যটন স্পট উপজেলা সদর ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ষায় নৌকায় আর শুকনো মৌসুমে পাঁয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। মূল স্পটে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। সড়কপথে যানবাহন নিয়ে সরাসরি স্পটে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এসব প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও প্রকৃতিপ্রেমী, ভ্রমণ পিপাসু লোকজন প্রকৃতির একটু অনাবিল আনন্দ ও সুখ পেতে ছুটে আসে মূলাগুল পর্যটন এলাকায়। কিন্তু সেখানে একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে আজও গড়ে উঠেনি কোন হোটেল, মোটেল কিংবা কটেজ।