হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে
25, November, 2020, 11:16:15:PM
নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘আপন শিক্ষায় ও কর্মগুণে সমৃদ্ধ ছিলেন প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী। তিনি স্পিকার থাকাকালীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে মন্ত্রীর পরিবর্তে সংসদ সদস্যকে সভাপতি, পার্লামেন্টের বিভিন্ন সংস্কার এবং আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন করার মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতার খুনীদের বিচারের পথ উম্মুক্তকরণে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবন তরুণদের কাছে তুলে ধরতে হবে’- বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বুধবার প্রয়াত স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’ এর উদ্যোগে বিআরটিসি’র কনফারেন্স রুমে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। সভায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি।
ড. শিরীন শারমিন বলেন, এই সংগঠন প্রয়াত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, তার নানাবাড়ি সিলেট হবার সুবাদে মরহুম স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ও তার পরিবারের সাথে পূর্ব থেকেই গভীর সম্পর্ক ছিল। এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার সময় আমার সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছিল। সংগঠনের সার্বিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই অবগত আছেন এবং তিনি এ সংগঠনকে আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসের কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই সংগঠন থেকে প্রশিক্ষণ নেয়ার অবকাশ রয়েছে। এসময় স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের ওয়েব সাইটের (www.hrcmemorial.com) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যেমন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন তেমনি তার অসাধারণ দক্ষতা ও নৈপুণ্যে জাতীয় সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এ বিষয়ে তিনি মরহুম স্পিকার কর্তৃক ইনডেমনিটি বিল রহিতকরণে তার বলিষ্ঠ ভূমিকার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সেদিন উপস্থিত ছিলেন এবং বাঙ্গালী জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার অসাধারণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার স্মৃতিচারণ করেন। মন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের গৃহীত কর্মসূচির প্রশংসা করেন এবং এ বিষয়টি বাস্তবায়নে তার মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
আলোচনা অনুষ্ঠানে সংগঠনের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্নেহধন্য স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তুলে ধরেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত হৃদ্যতা, কুটনৈতিক জীবনের শুরুতে জাতির পিতার সান্নিধ্য, আনুগত্যের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, প্রবাসী মুজিবনগর সরকার ও ভারতীয় সরকারের সাথে ঘনিষ্ট যোগাযোগ, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতার সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন, ৭৫ এর আগস্ট ট্রাজেডিতে তাঁর মানবতাবাদী অকুতোভয় ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুকে সাংবিধানিকভাবে জাতির পিতার মর্যাদা প্রদানে সংসদে রুলিং, কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের পথ প্রশস্তকরণ এবং পার্লামেন্টারী কুটনীতির আওতায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারে মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বলিষ্ঠ অবদানের কথাও তুলে ধরেন। তিনি হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ গঠনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা, পরামর্শ ও আর্থিক আনুকূল্যের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানের সূচনা-বক্তব্যে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ এহছানে এলাহী বলেন, প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর স্মৃতিকে ধারণ করে ২০১৯ সালের ২১জুন সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর প্রতি অগাধ শ্রদ্ধাবোধ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদকে ৫ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন এবং সংগঠন পরিচালনার জন্য কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী বেশকিছু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সকল দেশপ্রেমিক, বিজ্ঞ ও মহৎপ্রাণ ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় এ সংগঠন অচিরেই দেশের একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্ধারিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি অনন্য সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিটাকের মহাপরিচালক(অতিরিক্ত সচিব) আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, রেজিস্ট্রার অব কপি রাইট- জাফর রাজা চৌধুরী(যুগ্ম সচিব), নার্গিস খানম(যুগ্ম সচিব), মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম(উপসচিব), মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর নাতি মাহসুন নোমান রশীদ চৌধুরী, দৈনিক স্বাধীন বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ আখলাকুল আম্বিয়া, স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের নির্বাহী সদস্য দুরদানা হোসাইন দিলিয়া, নির্বাহী সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ আবু সাঈদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ফারাবী রহমান এবং আজীবন সদস্য তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।
এছাড়া সভায় ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন, সিনিয়র সচিব(দুদক) দেলোয়ার বখত, বেনবেইস এর মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান, ডা. সামন্ত লাল সেন, সিএম তোফায়েল সামী, সিলেট থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, আজীবন সদস্য ফালাহউদ্দিন আলী আহমদ, লন্ডন থেকে ব্যারিষ্টার কুতুবউদ্দিন সিকদার, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিএস বদরুদ্দোজা শাহ শাহীন, বিশিষ্ট ড্যাটা এনালিস্ট আলী আক্কাছ প্রমুখ।