টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, যতদুর চোখ যায় ততদুর সবুজের ফাঁকে হলুদের সমাহার। আর এ সুযোগটা লুফে নিচ্ছে মৌমাছিরা। শীতের কুয়াশাকে উপেক্ষা করে সরিষা ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন কৃষকরা। শীঘ্রই সরিষা ঘরে তুলবেন কৃষকরা। রাস্তার দু’পাশের জমিগুলোতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। বাতাসে দুলছে এসব সরিষা ফুল।
ফুলের এই দোল খাওয়া সবার মন কেড়ে নেয়। সরিষার ফুলে ফুলে হলুদ বর্ণের জমিগুলোতে আশপাশ সহ দূর-দূরান্ত থেকে সৌখিন প্রকৃতি প্রেমিকরা বেড়াতে আসছেন। ফুলের সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে তরুণ-তরুণীরা ছুটে যাচ্ছেন হলুদের মাঠে। নিজের ছবির সাথে সরিষা ফুলের ছবি ধরে রাখছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার উফশী জাতের ২১ হাজার ২১৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ২৪ হাজার ৪৪৫ হেক্টর মোট ৪৫ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। ফলনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৯৬৮ মেট্রিকটন।
এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৩০ হেক্টর, বাসাইলে ৪ হাজার ৮২০হেক্টর, কালিহাতীতে ৩ হাজার ১৩০ হেক্টর, ঘাটাইলে ২ হাজার ৩৫২ হেক্টর, নাগরপুরে ১০ হাজার ৭৫ হেক্টর, মির্জাপুরে ৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, মধুপুরে ৪৬২ হেক্টর, ভূঞাপুরে ১ হাজার ৮৩০ হেক্টর, গোপালপুরে ৩ হাজার ৬০ হেক্টর, সখীপুরে ২ হাজার ১৪০ হেক্টর, দেলদুয়ারে ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর এবং ধনবাড়ী উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। জেলায় গত বছর ৪১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছিল।
কৃষকরা জানান, এবার সরিষা ক্ষেতে ভালো ফুল ফুটেছে বিধায় ভালো ফলনও আশা করা যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন কৃষকরা। আমন ধান ওঠার পর বোরো ধান লাগানোর আগ পর্যন্ত জমি ফাঁকা থাকে। তাই শাক-সবজির পাশাপাশি তারা সরিষার আবাদ করে থাকেন। প্রতি বিঘা জমিতে সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৬ মণ সরিষা উৎপাদিত হয়।
সদর উপজেলার কৃষক বাহেজ সরকার, কালিহাতী উপজেলার মোমিনুল হক, আব্দুর রশিদ, কাদের প্রামাণিক, মির্জাপুরের জাহিদ হোসেন, রকিবুল আলম, নাগরপুরের ছালামত মিয়া, নাজমুল করিম সহ অনেকেই জানান, সরিষা আবাদে সেচ, সার ও কীটনাশক অনেক কম ব্যবহৃত হওয়ায় খরচও কম হয়। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বাম্পার ফলন হবে।
তারা আরও জানান, সরিষা চাষ করে মানুষ শুধু তেল তৈরি করে না। এই সরিষা ভাঙিয়ে খৈল ও গাছ থেকে ভূষি তৈরি হয়। যা গরুর ভালো খাদ্য এবং ভালো জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌচাষিরা বাক্স স্থাপন করে মধু উৎপাদন করে থাকে। মৌমাছি সরিষা ফুল থেকে মধু আহরণ করে থাকে। এতে সরিষার পরাগায়ণ বেড়ে যায়, ফলনও ভালো হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, সরিষা দেশের আবহাওয়া বান্ধব এবং লাভজনক ফসল। মাত্র ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। সরকারি প্রণোদনার আওতায় কৃষকদেরকে এক বিঘা জমির জন্য সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও সরিষার বাম্পার ফলন হবে।