কুবি প্রতিনিধি: বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ১ম বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষ পর্যন্ত ছয়টি ব্যাচে মোট ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। কিন্তু ৭ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে কুবিতে বিদেশি শিক্ষার্থী নেই একজনও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে তিনজন এবং ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে একজন নেপালের শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এই চারজন ছাড়া আর কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি।
বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই উল্লেখযোগ্য পরিমানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেখা যায় নি।
ওয়েবসাইটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়ার ব্যাপারে কোনো ধরনের দিক নির্দেশনা না থাকা, বিদেশিদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা, প্রশাসনের অবহেলা ইত্যাদি কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী পাচ্ছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
এ প্রতিবেদনের প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার কিছু কারণ উঠে এসেছে তাদের মুখে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সুবর্ণা মোস্তফা বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার পিছনে আবাসন সমস্যাকে দায়ী করে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সমস্যাই বিদেশি শিক্ষার্থী আসার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা বলে মনে করি। যেখানে প্রতিবছর এক হাজারেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সেখানে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের মাত্র একটি হল রয়েছে।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়িত সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী না আসার জন্য ওয়েবসাইটের বেহাল দশাকে অন্যতম কারণ মনে করছেন। তিনি বলেন, বাইরের দেশের একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে গেলে প্রথমে ওয়েবসাইটে ঢুকে সবকিছু দেখবে। কুবির ওয়েবসাইটে কোন অনুষদ কিংবা কোন বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে সেগুলো লিখা থাকলেও বিভাগ বা বিষয়গুলোতে মূলত কী পড়ানো হবে তা অনেক ক্ষেত্রেই বিস্তারিত দেয়া নেই। দীর্ঘদিন ধরে ওয়েবসাইটকে আপগ্রেড করার কথা শুনে আসলেও সেরকম কোন উন্নতি দেখতে পাই নি।
তিনি আরও বলেন, ওয়েবসাইটের এতই বেহাল দশা যে সাধারণ ভর্তি পরীক্ষার চাপেই অনেক সময় সার্ভার ডাউন হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের বলেন, গতবছর শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে নেপালি ও ভারতীয় মিলে মোট ১৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারনে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যদিও আমরা এটার প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েছিলাম। আর বিদেশি শিক্ষার্থীদের বর্তমানে পর্যাপ্ত সুবিধা দেয়া সম্ভব না, তবে সামনে আমাদের আধুনিক ক্যাম্পাস বাস্তবায়িত হলে বিদেশি শিক্ষার্থীরাও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের অপূর্ণতার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সেভাবে তৈরি হয়নি।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ তৈরি করতে হবে তবেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর ব্যাপারে সামনে আগাতে পারবো।
ওয়েবসাইটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত তথ্য না থাকার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ওয়েবসাইটে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য না থাকার কারন হচ্ছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনসহ নানা বিষয় রয়েছে যেগুলো আমাদের প্রস্তুত নয়। তাই আমরাও এ অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের ভর্তি করানোর ব্যাপারে ভাবছি না।