কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচন: একাট্টা আওয়ামীলীগের সামনে অগোছালো বিএনপি
3, January, 2021, 5:35:23:PM
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: দ্বিতীয় দফায় কুষ্টিয়া পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৬ই জানুয়ারী। ইতিমধ্যে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। মাঠে নেমেছে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। ভোটারদের মন জয় করতে কাজ করে যাচ্ছে প্রার্থীরা। নানা প্রতিশ্রুতি আর ব্যানার ফেষ্টুনের পসরা সাজিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
কুষ্টিয়া পৌরসভায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্ষিয়ান নেতা আনোয়ার আলী। আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে কাজ করছে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে প্রচারণায় নেমেছেন সর্বস্তরের জনগণ।
অপরদিকে অগোছালো বিএনপি। জেলা ও উপজেলা বিএনপি তে গ্রুপিংয়ের কারণে নাজেহাল অবস্থা বিএনপির প্রার্থী বশিরুল আলম চাঁদের। দুই এক জায়গায় পোষ্টার ছাড়া ভোটের মাঠে বিএনপি প্রার্থীর তেমন কোনো প্রচারণা চোখে পড়েনি। এমনকি দলের নেতারাও সেভাবে তার পক্ষে এখনো মাঠে নামেননি। মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে গ্রুপিং চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। আনোয়ার আলীর মত বর্ষীয়ান ঝানু নেতার বিপরীতে চাঁদের মত দুর্বল প্রার্থী দেওয়ায় বিএনপিতে হতাশা বিরাজ করছে। বিএনপির অনেক নেতা কর্মীরা চাঁদের পক্ষে নির্বাচনের মাঠে নামতে নারাজ। বিশেষ করে গত সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার সমর্থিত নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আখন্দ প্রচারণা শুরু করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতীক বরাদ্দের পর প্রস্তুতি সভার মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছে। পরিকল্পনা মোতাবেক প্রতিদিন মাঠে নামবেন মেয়র প্রার্থী আনোয়ার আলী। সামনে প্রচারণার মাত্র ১৫ দিন বাকি থাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে সময় দেওয়া কঠিন হবে। তাই একাধিক ওয়ার্ডে একদিনে প্রচারণার বিষয়টি আমলে নিয়ে কাজ করছেন দলের নেতারা। এর বাইরে জেলা, উপজেলা ও শহর আওয়ামীলীগের নেতারা আনোয়ারের পক্ষে আলাদা আলাদা প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রতিটি ওয়ার্ডে। শহর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতার নেতৃত্বে একাধিক টিম মাঠে নেমেছে। তারা আনোয়ার আলীর পক্ষে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা বলেন, মেয়র প্রার্থীর পক্ষে দলের সব নেতা মাঠে নেমেছেন। দল ঐক্যবদ্ধ। নৌকাকে জয়ী করতে সব ধরণের প্রচারণা শুরু হয়েছে। আশা করি নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রচারণা চালাবেন বাড়ি বাড়ি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রিয় নেতা আনোয়ার ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তার পক্ষে শুধু নেতা নন, সব শ্রেণী-পেশার মানুষ মাঠে নেমেছেন। নৌকার গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। গতবারের থেকে এইবার বেশি ভোটে জয়ী হবে ইনশাল্লাহ। এদিকে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ মাঠে নেমেছে আলাদা আলাদাভাবে। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও টিম করে মেয়র এর ভোট করছেন। আওয়ামীলীগ যেখানে ঐক্যবদ্ধ, সেখানে বিএনপিতে পুরো উল্টো চিত্র। বিলুপ্ত মজমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় দলের বড় একটি অংশ ক্ষুব্ধ। যারা গতবারের প্রার্থী শহর বিএনপির সভাপতি কুতুব উদ্দিনের সমর্থক ছিলেন তারা বিরাগভাজন। আর এই কুতুবউদ্দিন মূলত বিএনপির জেলা যুগ্ম সম্পাদক এবং গতবারের সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার অত্যন্ত আস্থাভাজন। এদিকে বশিরুল আলম চাঁদ অনেকদিন যাবত দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ছিলেন না, তাই দলে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। জেলা, উপজেলা ও শহর বিএনপির একটি বড় অংশ চাঁদ বিরোধী। তারা কুতুব উদ্দিনের মনোনয়নের পক্ষে ছিলেন। কুতুবউদ্দিনকে মনোনয়ন না দেয়ায় তারা নির্বাচনের মাঠে নামার বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শামিম উল হাসান অপু বলেন, এখনো প্রচারণা শুরু করেনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। আর কেন্দ্র থেকে যেহেতু বশিরুল আলম চাঁদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাই দলের সকল নেতা তার পক্ষে কাজ করবে বলে আশা করি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। দুই-একদিনের মধ্যে জোরেশোরে মাঠে নামা হবে। আর নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলে ধানের শীষের জয়ের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। এদিকে ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আখন্দ নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন।