সিলেট প্রতিনিধি : মহামারী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় স্ট্রেইনে নাজেহাল বিলেত। সেখানে বসবাসরত সিলেটিরা আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিনই ব্রিটেন থেকে আসছে মৃত্যুর খবরও। এতে উদ্বিগ্ন সিলেটের স্বজনরা। এই অবস্থায় অনেকেই ব্রিটেন থেকে ছুটে আসতে চাইছিলেন দেশে।
গত এক মাসে ব্রিটেন থেকে এসেছেনও প্রায় ২ হাজার প্রবাসী। কিন্তু সিলেটে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের বিধিনিষেধের কারণে হঠাৎ করে দেশে আসাও বন্ধ করে দিচ্ছেন ব্রিটেন প্রবাসীরা। আজ থেকে সিলেটে যারা আসবেন তাদের যেতে হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে। এ কারণে দেশে আসা যাত্রীসংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
ব্রিটেন থেকে সিলেটে সর্বশেষ ফ্লাইট এসেছিল গত বৃহস্পতিবার। এদিন ২০৫ জন যাত্রী সিলেটে আসেন। পূর্বের নিয়ম চালু থাকার কারণে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে চলে যান।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ সোমবার সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রিটেন থেকে আসছে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট। ওই ফ্লাইটেও প্রায় ২০০ যাত্রীর টিকিট বুকিং ছিল। গত ২ দিনে ব্রিটেনে প্রায় দেড়শ’র মতো যাত্রী তাদের টিকিট বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে খুব কম সংখ্যক যাত্রীকে নিয়ে আজ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসছে ফ্লাইটটি।
বাংলাদেশ বিমান সিলেটের ম্যানেজার মো. ফারুক আলম জানান, আজ ব্রিটেনের হিথ্রো থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট আসছে। এই ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা মাত্র ৫৫ জন। এর মধ্যে কয়েকজন ঢাকায় যাবেন। বাকিরা সিলেটে নামবেন।
তিনি জানান, গত দু’দিনে অনেকেই টিকিট বাতিল করে দিয়েছেন। আগামী ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা আরো কমে যাবে বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেটের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিয়ে ব্রিটেনেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কমিউনিটি নেতারা জানিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু করে ব্রিটেন প্রবাসীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হচ্ছে। এতে করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়বে প্রবাসীরা। কারণ ব্রিটেনের সঙ্গে সিলেটের সম্পর্ক শুধু আত্মিকই নয়, বহু মাত্রিকও। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে। অনেক প্রবাসী দেশে বিনিয়োগ করেছেন। জরুরি প্রয়োজনেও তারা এখন গেলে কোয়ারেন্টিন ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এতে অনেকেই ক্ষতির মুখোমুখি হবেন।
সিলেটের প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ব্রিটেন ফেরতদের নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার জন্য আপাতত দু’টি হোটেল চূড়ান্ত করে রেখেছেন। এ দু’টি হোটেল হচ্ছে- দরগাগেইটস্থ হোটেল হলি সাইড ও হোটেল স্টার প্যাসিফিক। আজ যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন প্রয়োজন হবে তাদের রাখা হবে এই দু’টি হোটেলে। সিলেটে আগত যাত্রীদের সংখ্যা যদি বৃদ্ধি পায় তাহলে চাহিদা অনুসারে ওই হোটেলগুলোকে প্রস্তুত করা হবে।
লন্ডন থেকে যারা আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সিলেটে আসবেন তাদের অবশ্যই প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। সিলেটে কোয়ারেন্টিনে যাত্রী সংখ্যা বাড়লে আরো কয়েকটি হোটেলে নেয়া হবে। এগুলোকে প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হোটেলগুলো হচ্ছে- আম্বরখানার হোটেল ব্রিটানিয়া, ধোপাদীঘিরপারের হোটেল অনুরাগ, মিরের ময়দানস্থ লা রোজ, মিরাবাজারস্থ হোটেল সুপ্রিম, মেন্দিবাগস্থ হোটেল গার্ডেন ইন, সোবহানীঘাটস্থ হোটেল ভ্যালি গার্ডেন।
চাহিদা বিবেচনায় এসব হোটেলে যাত্রী উঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ বিষয়ক কর্মকর্তা) শামমা লাবিবা অর্ণব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সরকারি খরচে বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের হোটেলে নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়াও থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা।
স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, সিলেটে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়ার আগে যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখা হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা যাত্রীদের পরীক্ষা করবেন। যদি সেখানে কারো করোনার লক্ষণ থাকে সেটি পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তবে, সরকার কর্তৃক কোয়ারেন্টিনের যে নির্দেশনা রয়েছে সেটি সবাইকে পালন করতে হবে। এজন্য তারা সিলেটের সব মহলের সহযোগিতা কামনা করেন।