সিলেট ব্যুরো: গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইয়ে চলন্ত বাসে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় চালক ও হেল্পার। এ ঘটনার দু’মাস পূর্বে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁেধ নববধূ গণধর্ষণ করা হয়। এ দু’টি ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আর এসব পাশবিক ঘটনা করোনা মহামারির সময়ে সিলেটে ঘটেছে। এছাড়াও সিলেটে আরো অনেক অমানবকি ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, গত বছরের ১১ মাসে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ধষর্ণের শিকার ৪৮৭ জন নারী ও শিশু চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে শিশু (০থেকে ১৮ বছর) ৩১৯ এবং নারী (১৯ বছরের উর্ধ্বে) ১৬৮ জন রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০২০সালের জানুয়ারীতে ২৬ শিশু ও ১৪ নারী,ফেব্রুয়ারীতে ৩৩ শিশু ও ১৭ নারী, মার্চে ৩৫ শিশু ও ১৭ নারী, এপ্রিলে ১৮ শিশু ও ৫ নারী, মে’তে ১৬ শিশু ও ১০ নারী, জুনে ২৭ শিশু ও ১০ নারী, জুলাইয়ে ৩০ শিশু ও ১৩ নারী, আগস্টে ৩২ শিশু ও ১৫ নারী, সেপ্টেম্বরে ২৯ শিশু ও ২০ নারী, অক্টোবরে ৩৮ শিশু ও ২৫ নারী এবং নভেম্বরে ৩৫ শিশু ও ২২ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বিভিন্ন মহলের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে, অপহরণ করে, দাওয়াত দিয়ে পার্টিতে এনে, এমনকি ডাকাতি করতে এসেও ধর্ষিত হয়েছেন অনেক নারী ও শিশু। আবার জোর করে ফিল্মী স্টাইলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বন্ধ থাকা সিলেট এমসি কলেজ এর প্রধান ফটক থেকে নবদম্পতিকে তুলে নিয়ে ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে নববধূকে গণধর্ষণের করা হয়। এ ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ ঘটনা ছাড়াও সিলেটে আরো অসংখ্য পাশবিক ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ধর্ষণের কিছু ঘটনার খবর গণমাধ্যমে এলেও অনেক ঘটনা থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। মান-সম্মানের ভয়ে অনেক ভুক্তভোগি তা প্রকাশ করেন না।
সিলেট জেলা বারের আইনজীবি এডভোকেট মামুন রশীদ বলেন, করোনা মহামারিতেও থেমে নেই ধর্ষণের ঘটনা। সামাজিক অবক্ষয় থেকে ধর্ষণের ঘটনার জন্ম হয়ে থাকে। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন। সিলেট মহিলা বিষয়ক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাত-দিন যেকোন সময় নারী নির্যাতন বিষয়ে টোল ফ্রি হেল্প লাইন নম্বর ১০৯-এ ফোন করে আইনী সহযোগিতা ও সেবা পাওয়া যাবে। ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।