সিলেট নগরীর প্রধান সড়ক দখল করে অবৈধ স্ট্যান্ড, চরম ভোগান্তি পথচারীদের
11, January, 2021, 7:21:38:PM
সিলেট ব্যুরো: সিলেট নগরীর মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। নগরীর প্রধান সড়কগুলো দখল করে শতাধিক কার-মাইক্রোবাস, সিএনজি-অটোরিকশা, পিকআপ, লেগুনার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এসব স্ট্যান্ডের বৈধ অনুমোদন না থাকলেও সংশি¬ষ্টদের ম্যানেজ করেই স্ট্যান্ডগুলো টিকে আছে বলে জানা যায়। যার কারণে অবৈধ স্ট্যান্ড সরাতে আগ্রহ নেই সংশি-ষ্টদের। ফলে সড়কগুলোতে সব সময় লেগেই থাকে। আর এই যানজট এখন নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদেরকে।
এদিকে, সিটি করপোরেশন বলছে নগরীতে সিসিকের অনুমোদিত কোনো বৈধ স্ট্যান্ড নেই। যেসব স্ট্যান্ড আছে সবকটি অবৈধ। তবে জনস্বার্থে নগরের কয়েকটি পয়েন্টে স্বল্প সময়ের জন্য ৫ থেকে ৬টি সিএনজি অটোরিকশা রাখার মৌখিক অনুমতি দিয়েছিলেন মেয়র। এসব সিএনজি যাত্রী উঠিয়ে দ্রুত রাস্তা ফাঁকা রাখবে। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত ঘটছে।
অটোরিকশা চালকরা বলেন, নির্ধারিত স্থান না থাকায় সড়কের পাশেই তাদের গাড়ি রেখে যাত্রী ওঠানামা করতে হয়। সড়কের পাশে গাড়ি রাখতে ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে ট্রাফিক পুলিশকে প্রতি মাসে গাড়ি নির্ধারিত টাকাও দেওয়া হয়।
ভূক্তভোগীরা জানান, মোড়ে মোড়ে অবৈধ মাইক্রবাস ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে কিছু রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের অসাধু ব্যক্তির পকেটে যায় চাঁদার টাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, যানজট নিরসনে প্রশস্ত করা হচ্ছে সিলেট নগরীর প্রতিটি সড়ক। সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চলছে সড়ক বর্ধিত করার কাজ। তবে সড়ক প্রশস্ত করায়ও সুফল পাচ্ছেন না নগরবাসী। সড়ক দখল করে গড়ে ওঠেছে একের পর এক অবৈধ স্ট্যান্ড। প্রতিটি মোড়েই দুই লেনের সড়কের দুই পাশেই একাধিক সারিতে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর সড়কের অবশিষ্ট যে অংশটুকু থাকে তাতে কোনোমতে এক সারিতে যান চালাচল করতে পারে। তাতেও অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। রাস্তার মাঝখানে অটোরিকশা থামিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ সেরে নেয়া, যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ অবলীলায় করে তারা। পরোয়া করে না মানুষের ভোগান্তির কথা। মোড়ে মোড়ে অবৈধ স্ট্যান্ড হওয়ায় অনেক সময় পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। খোদ নগর ভবন ও ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ের পাশেই গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। বিশেষ করে সড়ক পার হওয়ার সময় বিপদে পড়েন বৃদ্ধসহ সকল শ্রেণী-পেশার কর্মজীবী মানুষজন। অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে নগরীর বিভিন্ন সড়কে যানজট লেগে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রশাসন থেকেও এগুলো সরানোর ব্যাপারে নেই কঠোর উদ্যোগ।
মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ কোর্ট পয়েন্ট, কুদরত উল¬াহ পয়েন্ট, শেখঘাট পয়েন্ট, সোবহানীঘাট, মেন্দিভাগ, উপশহর, ধোপাদীঘিরপাড়, নয়াসড়ক, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মেজরটিলা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, রিকাবীবাজার, মজুমদারী, ওসমানী হাসপাতালের সামনে, মদিনা মার্কেট, বাগবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকার সড়কগুলোও দখল করে সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন পাড়া-মহল¬ায়ও অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে ওঠেছে। খোদ নগরীর অভিজাত এলাকা শাহজালাল উপশহরে অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ডের সংখ্যা ১৫টিরও বেশি রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পিকআপ, লেগুনা ও মাইক্রো বা কারের স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব অবৈধ স্ট্যান্ডের সাথে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি, স্থানীয় প্রভাবশালী ও অনেক রাজনৈতিক নেতা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের প্রভাবেই সড়ক দখল করে বছরের পর বছর স্ট্যান্ড বাড়ছে। এদিকে, চারটি সড়কের সংযোগস্থল নগরীর প্রবেশমুখ হুমায়ুন রশীদ চত্বর। এই পয়েন্টের চারটি মোড়ে গড়ে ওঠেছে অটোরিকশার ৬টি স্ট্যান্ড। এ পয়েন্টের দক্ষিণ দিকে মোগলাবাজার-কদমতলী সড়কে অটোরিকশার স্ট্যান্ড। পশ্চিম দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে স্ট্যান্ড ও উত্তর দিকে ভার্থখলা-হুমায়ুন রশীদ চত্বর রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে ওঠেছে। চারমুখি এই সড়কের বেশিরভাগ জায়গা দখল করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে অসংখ্য অটোরিকশা। এছাড়া কদমতলী মুক্তিযোদ্ধা চত্বরের জকিগঞ্জ রোডের অটোরিকশা স্ট্যান্ড। এ রোডের অটোগুলো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থেকে যানজটের সৃষ্টি করে। এ স্ট্যান্ডের ঠিক উল্টো দিকেই পেট্রোল পাম্পের সামনে কদমতলী টু বাসস্ট্যান্ড-রেলগেট-ভার্থখলাগামী এবং ঝালোপাড়া রোডের মুখে অটোরিকশা ও লেগুনার অবৈধ স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশে অটোরিকশা ও ইজিবাইকসহ ছোট যানবাহন সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এতে এসব স্থানে যানজটে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া মিউনিসিপ্যাল গভর্মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিস প্রজেক্ট (এমজিএসপি)-এর অর্থায়নে ক্বীন ব্রিজ থেকে হুমায়ুন রশীদ চত্বর পর্যন্ত ১৪শ ২৫ মিটার দৈর্ঘের সড়কটি চার লেন এবং ক্বীন ব্রিজ থেকে ঝালোপাড়া হয়ে মুক্তিযোদ্ধা চত্বর পর্যন্ত রাস্তা ২ লেনে উন্নতি করার কাজ পুরো শেষ হয়নি। তবে ক্বীন ব্রিজ-হুমায়ুন রশীদ চত্বর সড়কটির কাজ প্রায় শেষ হলেও এর সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ দুটি সড়কের দু’পাশে রাখা হয়েছে যাত্রীবাহী বাস, পিকআপ, লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন। বাস টার্মিনালের সড়কের দু অসংখ্য রাখা হয়েছে সারিসারি যাত্রীবাস। এছাড়া ঝলোপাড়া সড়কে মুখে গড়ে ওঠেছে পিকআপ ও সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। ফলে প্রতিনিয়ত লেগে থাকে যানজট। সোবহানীঘাট সবজি বাজারের সামনে মূলসড়কে সকাল-দুপুরে অগনিত গাড়ী আরো অবলীলায় দাড়িয়ে থাকে। কালিঘাট, কাজিরবাজারেও একই চিত্র দেখা যায়। সোবহানীঘাটস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালের দেয়াল ঘেষা সড়কের ওপর কেন সিএনজি অটোরিকশা রাখা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে এক অটোরিকশা চালক বলেন, সবাই রাখে তাই আমিও রাখি। আর এখানে মাত্র ৩টা সিএনজি অটোরিকশা আছে, গাড়ী চলাচল করতে সমস্যা হওয়ার কথা না। ট্রাফিক পয়েন্টের কাছেই সড়ক দখল করে গাড়ী রাখেন পুলিশ কিছু বলে- এমন প্রশ্ন করলে ওই চালক বলেন, পুলিশকে কিছু না দিলে কি বসতে দিবে। তবে ট্রাফিক পুলিশ মাঝে মাঝে আমাদের ওঠিয়ে দেয়। শিবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সোয়েব আহমদ বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্পটে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্ট্যান্ডগুলোর কারণে সবসময় যানজটের কবলে পড়েন নগরবাসী। এছাড়া স্ট্যান্ড থেকে সিএনজিতে ওঠলে তাদের কথা অনুযায়ী ভাড়া দিতে হয়। কম বেশি করা যায় না। চালকরাও আমাদের অপারগতা বুঝে বেশি ভাড়া দাবি করেন। শাহী ঈদগাহ এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, নগরজুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে এক এলাকার গাড়ি অন্য এলাকার যাত্রী তুললে চালক ও যাত্রীদের হেনস্থা করেন স্ট্যান্ডের দায়িত্বরতরা। মানুষের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে স্ট্যান্ডগুলো। স্বাধীন বাংলাকে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী বিধায়ক রায় চৌধুরী কর্মকর্তা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরের স্ট্যান্ড করার জন্য কাউকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সবাই ইচ্ছেমত গাড়ী সড়কে রাখছেন। এজন্য সিসিকের পক্ষ থেকে আমরা মাঝে মাঝে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করি। এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ এ প্রতিবেদককে বলেন, বৈধ বা অবৈধ স্ট্যান্ড এর ব্যাপারে আমাদের জানা নেই। কারণ স্ট্যান্ডের অনুমোদন আমরা দেই না। স্ট্যান্ড থাকা না থাকার বিষয়গুলো আমাদের আওতার মধ্যে পড়ে না। কেউ যদি সড়ক ব্যবহারের আইন না মানেন তাহলে সেসব ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করি। অনেক সময় মামলা দেই। অনেক সময় সড়কের আইন মানার জন্য সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে এবং অব্যাহত আছে।