গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার বিএনপি সমর্থিত প্রয়াত মেয়র প্রার্থী শহীদুল্লাহ শহীদের তিন সন্তানসহ স্ত্রী নিজ বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে আছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন প্রয়াত শহীদের স্ত্রী। মঙ্গলবার রাতে শহীদের স্ত্রী শাহীন সুলতানা সুইটি গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেন।
সুইটি জানান, তার স্বামী শহীদুল্লাহ শহীদ শ্রীপুর পৌরসভায় মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দুবার নির্বাচন করলেও শেষবার নির্বাচনের মাঝপথে মারা যান। এতে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর পুনরায় তফসিল হয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়। এই নির্বাচনে শহীদের ভাই শাহ আলম ধানের শীষের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হন।
সুইটি জানান, তার স্বামীর যাবতীয় চিকিৎসা স্বামীর ভাই শাহ আলম, মোস্তফা কামাল ও শহীদের ভগ্নিপতি হারুনর রশিদ সম্পাদন করেন। স্বামীর চিকিৎসার কথা বলে চেকের মাধ্যমে ২০ লাখ ও নগদ ৫ লাখসহ ২৫ লাখ টাকা নেন তারা। কিন্তু চিকিৎসার বিষয়ে সুইটিকে আড়ালে রাখেন ওই তিনজন। পরবর্তী সময় স্বামীর মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তৈরি হলেও সুইটিকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেন ওই তিন ব্যক্তি। একপর্যায়ে ২৬ জানুয়ারি রাতে শাহ আলম সুইটির বাসার চারদিকে তালা লাগিয়ে দেন। সকালবেলা একটি পকেট গেট খোলা থাকায় সুইটি বাইরে এসে দেখেন সাতটি গেটে তালা লাগানো। নিরাপত্তাকর্মীর কাছ থেকে সুইটি জানতে পারেন শাহ আলম তালা মেরে চাবি নিয়ে গেছেন। পরবর্তী সময় শাহ আলম শহীদের বাসায় অবস্থানরত শহীদের স্ত্রী ও সন্তানদের নজরবন্দি করতে সিসি টিভির নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেন।
সুইটি জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর শাহ আলম গং তার স্বামীর সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জোর করে দখল করেন। সব উপার্জন বন্ধ ও নজরবন্দি থাকায় সুইটি তিন সন্তানসহ নিজ বাসায় আটকা পড়েন। পারিবারিকভাবে এ ঘটনার কারণ জানতে ব্যর্থ হয়ে সুইট স্বাক্ষরিত একটি সাধারণ ডায়েরি তার বাবা শেখ আবদুর রাজ্জাকের মাধ্যমে ৩০ জানুয়ারি শ্রীপুর মডেল থানায় পাঠান। ওই রাতেই শ্রীপুর থানার এসআই সুমন সুইটির বাসায় আসেন এবং ঘটনা তদন্ত করেন। পর দিন ৩১ জানুয়ারি সুইটির বাবা শেখ আবদুর রাজ্জাক শ্রীপুর থানার ওসির সঙ্গে দেখা করলে ওসি শাহ আলম গং এসেছিল বলে জানিয়ে বিষয়টি আপস করবেন বলে রাজ্জাককে জানান।
সুইটি যেন বাইরে যোগাযোগ করতে না পারে, সে জন্য সোমবার রাতে শাহ আলম গং সুইটির বাসার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সুইটির অভিখযোগ, শাহ আলম গং তাকে ও তার তিন সন্তানকে তার স্বামীর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য যে কোনো সময় হত্যা করতে পারেন। অথবা তাদের আত্মহত্যা করতে বাধ্য করতে পারেন।
বর্তমানে সুইটি তিন সন্তানসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন দাবি করে সরকারের নিকট নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
শ্রীপুর থানার ওসি ইমাম হোসেন জানান, পুলিশ সুইটির বাসায় যায়নি, আসামিদের বাসায় গেছেন। সুইটি সন্তানসহ অবরুদ্ধ কিনা তিনি জানেন না।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুমন জানান, একটি জিডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি শহীদের বাসায় গেছেন। সুইটির সঙ্গে কথা বলেছেন।
সব গেট বন্ধ ও একটি পকেট গেট খোলা থাকার কথা স্বীকার করলেও এসআই সুমন জানান, পরবর্তী সময় বাদী পক্ষ তার কাছে আসেননি। তবে সুমনের কথামতো বাদীর বাবা ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাহ আলমের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।