সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে প্রভাবশালীদের দখলে বিলীন হওয়ার পথে ঐতিহ্যের বোকা নদী। একসময় যার রূপ, যৌবন ছিলো প্রেমে পড়ার মত, বর্তমানে তা কেবল অতীত। জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমার শাখা এই নদীটি দৈর্ঘ্যে ৩৩ কিঃ মিঃ এবং প্রস্থে প্রায় ৩০ফুট যা দ.সুনামগঞ্জের মহাসিং নদীর মোহনার সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ছাতকের জাউয়াবাজারের অবস্থান নদীর তীরবর্তী হওয়ায় দিন দিন নদীটি তার অস্তিত্ব রক্ষার তীব্র সংকটে রয়েছে। একসময় যার রূপের জলে মাঝি মাল্লা, জেলে, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ সবাই ভাসতো নাব্যতা হারিয়ে এখন তা কেবল ময়লার স্তুুপ। নদী দিয়ে আগে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থান দিয়ে পণ্য আমদানী রপ্তানী করলেও নদীর চারপাশে দোকান পাট নির্মাণের ফলে নদীটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া নদীর পাড় ভরাট ও অবৈধভাবে দোকানপাট ও মার্কেট নির্মাণের ফলে বর্ষায় ¯্রােতসহ নতুন পানি আসলে তা গতি আটকে বিকল্প গতিতে বয়ে যায়। ফলে নদীর পার্শ্ববর্তী বাড়ী আর আশেপাশের গ্রামের উপর প্রভাব পড়ার কারনে দেখা দেয় নদী ভাঙন।
জানা যায়, বোকা বা ঘনুরা নদী দিয়ে আগে বড় বড় নৌকা চলাচল করতো। তীরে বাজার হওয়ায় এসব নৌকায় করে ব্যবসায়ীরা চাল, গম, কাঁঠাল এবং বিভিন্ন সবজী আমদানী করতেন। পাশাপাশি বর্ষার সময় নদীর উপর নৌকা বিক্রীর হাট বসতো। আর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতা বিক্রেতা এসে বাহারি ধরনের নৌকা ক্রয় বিক্রয় করতেন। ভরা পানিতে অনেক মানুষ লেওয়া জাল, লাঠি জাল বেঁয়ে এবং বর্ষার শেষের দিকে বরশী দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মাছও শিকার করতেন। আরও জানা যায়, বর্ষায় নদীর উপর কয়েকটি নৌ স্ট্যান্ড থাকায় আশে পাশের অঞ্চলের মানুষের যতায়াতের একমাত্র সহজ পথ ছিলো বোকা নদী। আর এসব নদীর ঐতিহ্য থাকলেও বর্তমানে তা কল্পনাতীত।
সরজমিনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে নদীর পূর্ব দিকে (হাবিদপুর-খিদ্রাকাপন) সুনামগঞ্জ - সিলেট মহাসড়কের পশে অবস্থিত কুমিল্লা বস্তি ভাঙনের ফলে নদী গর্ভে চলে যায়। যেখানে বসবাস করতেন রিকশা চালক থেকে নিয়ে দারিদ্র্য শ্রেনীর প্রায় অর্ধশত পরিবার। তাছাড়া নদী দখল, ভরাট ও মার্কেট নিমার্ণের ফলে নদী ভাঙনে ৪-৫ বছরের মধ্যে নদীর পশ্চিম দিকে (লক্ষমসোম গ্রামের) প্রায় ৪০টি পরিবার জমিসহ ঘর ,বাড়ী হারিয়ে সহায় সম্ভলহীন হয়েছেন। যার ফলে একদিকে মূল নদী হচ্ছে সরু অন্যদিকে ভাঙন তান্ডবে নদী তার ক্ষোভ ঝাড়ছে। বর্তমানে নদীর তীরে বসবাসরত পরিবারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত। ধীরে ধীরে তাদের সব সম্পদ চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে।
অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষ অবৈধ দখলদারের হাত থেকে তাদের জায়গা উদ্ধার করতে প্রতি বছর চোখে পড়ার মত উচ্ছেদ অভিযান করলেও বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও নদীর জায়গা উদ্ধার করতে দেখা মিলে না কোনো অভিযান। আর এতে হতাশ নদী পড়ে বসবাসরত পরিবারের।
নদী গর্ভে সর্বস্ব হারানো, আরশ আলী বলেন, ‘ এক সময় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে প্রায় ৪০টি পরিবার ছিলাম। ভালোই চলছিলো আমাদের দিন যাপন। কিন্তু হটাৎ করে কি এমন হলো যে ৫-৭ বছরের মধ্যেই নদী ভাঙন ব্যপক হারে হয়। আর তাতে আমাদের সব কিছু বিলীন হয়ে যায়’।
রিকশা চালক সুজন মিয়া বলেন, ‘ নদীর পাড়ে অবস্থিত বস্তিতে আমিসহ আরও কয়েকটি পরিবার বাস করতাম। কিন্তু হঠাৎ করে নদী ভাঙন খুব বেশী বেড়ে সব কিছু তলিয়ে যায়। এখন আমাদের ভাড়া বাসায় বউ বাচ্ছা নিয়ে থাকতে হয়। খুবই মানবেতর দিন পার করছি আমরা’।
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর জায়গা অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী খুব দ্রুত নদীর পাড় রক্ষায় উচ্ছেদ অভিযান করা হবে।