জৈন্তাপুরের লালাখাল সীমান্ত দিয়ে আসছে গরু-মহিষ ও মাদক
16, March, 2021, 3:47:4:PM
জৈন্তাপুর প্রতিনিধি: সিলেটের জৈন্তাপুর-লালাখাল সীমান্ত এখন চোরাকারীর নিরাপদ রোড। জৈন্তাপুর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে গোপন চুক্তিতে চলছে অবৈধ ভারতীয় গরু-মহিষ, মাদক ও মটর শুটির রমরমা ব্যবসা। দিন রাত সমান তালে চলছে সীমান্তের অবৈধ পথে গরু-মহিষ, মাদক দ্রব্য সহ আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য আসছে বাংলাদেশে। একই সাথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাঁচার করা হচ্ছে মটরশুটি, সোনার বার, মেলামাইন সহ নানা পণ্য। সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী সহ স্থানীয় প্রশাসনের নাটকীয় নিরবতায় জনমনে কৌতুহলের সৃষ্টি হচ্ছে। সচেতন মহলের দাবী চোরাকারবারীদের কাছে অসহায় প্রশাসন। কারণ গোপন চুুুুক্তিতে বিরাট মাসহারা দিয়ে চলে এ সব ব্যবসা। জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল রোড প্রধান চোরাই করবারের রোড হিসাবে এখন সবার পরিচিত। এই রোড দিয়ে প্রতি রাতে যুদ্ধের সাজোয়া যানের মত চলে চোরাই গাড়ির বহর। নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট, প্রতিনিয়ত হচ্ছে চোরাই গাড়ির ধাক্কায় সড়ক দুর্ঘটনা। কেউ কথা বললে দেওয়া হয় হুমকি দামকি। গত জানুয়ারী মাসে কলেজ পড়–য়া এক ছাত্র মোবাইলে ভিডিওধারণকৃত গরু পাচারের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ছাত্রের করা ভিডিওটি ভাইরাল হলে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেত ব্যাপক তুলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে উপজেলা আইনশৃংখলা সভায় ব্যাপক আলোচনা হয়।
এসব অবৈধ ব্যবসা নির্বিঘœ করা জন্য সীমান্ত বাহিনীর সাথে লিয়াজো করেন শৃঙ্খলাবাহিনীর একান্ত আস্থাভাজন শাহিন নামক এক যুবক সহ আরও চার পাঁচ জন লাইনম্যান। চোরাকারবারীদের কাছ থেকে গরু-মহিষ প্রতি ২ হাজার টাকা এবং মটরশুটি, চাল প্রতি বস্তা প্রতি ১৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রিয় আস্থাভাজন লাইনম্যান খ্যাত দালালরা। প্রতিদিন প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা ভাগ বন্টন হয় বিভিন্ন বাহিনীর কাছে।
এ ব্যপারে লালাখাল ক্যাম্প কামান্ডারের সাথে মুটোফোনে কথা বললে তিনি জানান, টাকা উত্তোলনকারীদের সাথে আমাদের এরকম কোন সম্পর্ক নেই। কে টাকা তুলে আলাপ করে দেখবো।
এ ছাড়া আলুবাগান, শ্রীপুর, মিলাটিলা, ছাগল খাউরী, কাঠালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওড়, ডিবির হাওড়, ডিবির হাওড় (আসামপাড়া), ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী গৌরী শংকর, কমলাবাড়ী, গুয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, জালিয়াখলা, কালিঞ্জী বাড়ী, লালাখাল গ্রান্ড, লালাখাল চা-বাগান, আফিফানগর চা-বাগান, বাঘছড়া, জঙ্গীবিল, তুমইর, ইয়াংরাজা, বালিদাঁড়া, বাঘছড়া, সিঙ্গারীপাড় সহ ১০ কিলোমিটার এলাকার জুড়ে চোরাকারবারীদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার গরু-মহিষ মাদক দ্রব্য সহ আমদানি নিসিদ্ধ পণ্য অবৈধ পথে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশ প্রবেশ করছে। স্থানীয়দের দাবী অবৈধ পথে ভারতে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা ও স্বর্ণের বার। বিনিময় আসছে ভারতীয় পাতার বিড়ি। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আলোচনা করে বৈধ ভাবে গরু-মহিষ ব্যবসার অনুমতি বা করিডোর স্থাপন করা হলে বাড়বে সরকারের রাজস্ব আয়। গত একসপ্তাহে জুড়ে প্রতিদিন এ প্রতিবেদক রাত ২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে অবৈধ ভাবে গরু-মহিষ সহ নানা নিষিদ্ধ পন্য বাংলাদেশ প্রবেশের এ চিত্র তুলে ধরেন।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আঙ্গীনা দিয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের পূর্ব বাজার, হরিপুর বাজারে গরু-মহিষ প্রবেশ করছে। সরকারের একটি গোয়োন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদন সূত্রে জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট এবং কানাইঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা চোরাকারবারীদের উন্মুক্ত এবং নিরপাদ রাস্তা হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে তথ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের প্রাথমিক তালিকা তৈরী করা হয়। সেই সাথে ভারতীয় চোরাচালান চাক্রের সাথে সংশ্লিষ্ট সীমান্ত এলাকার প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদেরও চিহিৃত করা হয়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক চোরাকারবারী দলের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, বিজিবি’র সাথে চুক্তি মাধ্যমে গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কোন কোন সময়ে ব্যবসায়ীরা কৌশলগত কারণে বিজিবি’র হাতে ৫-২০টি গরু-মহিষ মামলার জন্য তুলে দেন। তার বিনিময় ভারত থেকে হাজার হাজার গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে বিজিবি।
জাতীয় গোয়োন্দা সংস্থার সাথে আলাপকালে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য, উপজেলা ও জেলা গণমাধ্যমকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে চোরাকারবারীদের সাথে। অবৈধ পথে সীমান্ত এলাকা দিয়ে গরু-মহিষ আসার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সীমান্তবর্তী বাসিন্দাগণ। সমঝোতার মাধ্যমে সিলেট সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে ভারত হতে গরু-মহিষ, মোবাইল, হরলিক্স, ঔষধ, মদ, ফেন্সিডিল, ইয়াবা, বিভিন্ন ব্যান্ডের সিগারেট, কসমেটিক্স, সুপারী, নি¤œ মানের চা-পাতা, টাটা গাড়ীর পার্স, টায়ার, স্প্রীং, মটর সাইকেল বাংলাদেশে নিয়ে আসা হচ্ছে। অবাধে চোরাকারবার বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলিতে নানা অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে। জৈন্তাপুর-মেঘালয় সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ ও বিজিবি’র নজরদারি এড়িয়ে চোরাকারবার ব্যবসা নিরাপদে পরিচালনা করা হচ্ছে। জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের পূর্ব বাজার, দরবস্ত বাজার, হরিপুর অবৈধভাবে আসা ভারতীয় পশুর হাট পরিচালনা করা হচ্ছে। উপজেলা সদরে ভারতীয় অবৈধ গরুরহাট উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র ১’শ গজ দুরে অবস্থিত। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদেই ভারতীয় পশুরহাট পরিচালনা করা হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারীদের কয়েকটি শক্তিশালী নেটওর্য়াক সক্রিয় রয়েছেও বলে জানা যায়।