বছর ঘুরে মার্চ মাস এলেই বাঙালির মনে এক মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি হয়। একদিকে স্বাধীনতা অর্জনের সুখকর অনুভূতি, অন্যদিকে এই অর্জনের পেছনে আত্মত্যাগের ইতিহাস। তবে স্বাধীনতা অর্জনের গৌরবময় অনুভূতি যেন সবকিছু ছাপিয়ে যায়, মনের অজান্তেই তৈরি করে গৌরবের বিশাল সোপান। ১৯৭১ থেকে ২০২১, পেরিয়ে গেছে বাঙালি জাতির নির্ভীক পদচারণার ৫০ টি বছর। এই পঞ্চাশ বছরে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালিকে দিতে হয়েছে নিজেদের প্রমাণ করার পরীক্ষা। এভাবেই নির্ভীক পদচারণায় বাঙালি সুপরিচিতি লাভ করেছে বিশ্বের দরবারে।
স্বভাবগতভাবেই মানুষ স্বাধীনচেতা। তাই কেউ যদি সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে তাহলে চেতনা রক্ষা এবং আত্মপরিচয় তুলে ধরার তাগিদে হলেও মানুষ ঝাপিয়ে পড়ে, ছিনিয়ে আনে নিজের অধিকার। ঠিক তেমনি আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে বাঙালি জাতি ঝাপিয়ে পড়েছিল স্ব অধিকার ছিনিয়ে আনার সংগ্রামে, মেতে উঠেছিল স্বাধীকার চেতনায়। আর এই চেতনার উজ্জীবন ই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য অর্জনে শক্তির যোগান দিয়েছিল। লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং মা বোনের সম্ভ্রম বিসর্জনের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাঙালী পায় নতুন এক পরিচয়।
স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তীতে মার্চ মাস আমাদের কাছে এক বিশেষ অর্থ বহন করছে। এই বছরকে ঘিরে পরিকল্পনার শেষ ছিলনা কিন্তুু করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সব পরিকল্পনার অবসান ঘটিয়েছে, জয়ের উল্লাসে মেতে উঠার বদলে অদৃশ্য শত্রুর কবলে আতঙ্কিত দিনযাপন করছে সকলে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কে ঘিরে বাঙালির মনের ক্যানভাসে যেই চিত্র আকাঁ ছিল তা কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে করোনা সংক্রমণের জন্য। জয় স্বভাবতই আনন্দের বিষয় আর সেই জয় যদি হয় নিজের জাতির স্বাধীনতা অর্জনের তাহলে সেটি আরো বেশি অর্থবহ হয়ে উঠে। এবছর স্বাস্থ্যবিধী মেনে চলে হয়তো স্বল্প পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হবে কিন্তু মনের কোঠায় আজন্ম সর্বকালের সব বাঙালি শ্রেষ্ঠ দিনটি উদযাপন করবে নিজেদের হৃদয়ে।
স্বাধীনতা সবসময় জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে অবস্থান করে আর সেই স্বাধীনতা যদি হয় নিজের জাতির স্ব অধিকার রক্ষার তাহলে সেটি আরোও গৌরবের তবে বরাবরের মতোই স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা রক্ষা কঠিন কারন প্রতিনিয়ত সেই অর্জিত স্বাধীনচেতা মানুষদের প্রমাণ করতে হয় যে শুধুমাত্র বছরের একটি দিন না বাকি দিনগুলোও সমুন্নত থাকবে এদেশের মানচিত্র এবং গৌরবগাঁথা। তখন একই সাথে জাতির সামনে থাকে বিভিন্ন সংকট সহ নাম না জানা হাজারো শত্রু তাই সেসব কিছুকে দূর করে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো বেশি সাহসিকতার কাজ। সকল ধরনের সংকট অতিক্রম করে বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে সুপরিচিতি লাভ করবে স্বাধীনতার মাসে এটিই কাম্য।