কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলসহ আশপাশ এলাকায় ঝড়ো আবহাওয়ায় হঠাৎ শুরু হওয়া গরম হাওয়ায় বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বোরো ফসল হারানোর আশংকায় এখন দিশেহারা বর্গা ও প্রান্তিক চাষীরা। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই সোনালী ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় ছিলেন কৃষক। এর মধ্যেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
গত রোববার বিকেলেও বিশাল হাওরের জমির রং ছিল সবুজ। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া তিন-সাড়ে তিন ঘন্টার কালবৈশাখী ঝড় ও গরম বাতাসে হাওরের বেশিরভাগ বোরো জমির ধান সাদা হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। হাওরের ইটনা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলার ২৫ হাজার হেক্টর বোরো জমির ধান একইভাবে আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলায় ১ লাখ ৬৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে এবং ফলনও অনেক ভাল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু গত রোববার রাতের কালবৈশাখী ঝড় ও গরম বাতাসে কিশোরগঞ্জে হাওরের ইটনা উপজেলার রায়টুটী, বাদলা, বড়িবাড়ী ইউনিয়ন, কিশোরগঞ্জ সদর, করিমগঞ্জ, হোসেনপুর, তাড়াইল, নিকলী ও কটিয়াদী উপজেলায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও হাওরের মিঠামইন উপজেলা, অষ্টগ্রাাম উপজেলা, কুলিয়ারচর ও বাজিতপুর উপজেলায় বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি ধান-২৮, ব্রিধান-২৯ সহ স্থানীয় জাতের ফুলধরা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, এর আগে কৃষকরা শিলাবৃষ্টি কিংবা আগাম বন্যায় ক্ষতির সম্মুখীন হলেও গরম বাতাসে বোরো জমি নষ্ট হতে এই প্রথম দেখেছেন। জমিতে বোরো ধানের ফুল আসা গাছের শীষ শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। মঙ্গলবারও হাওরের জমিগুলোতে গরম আবহাওয়া বিরাজ করছিল। বিস্তীর্ণ বোরো জমিতে গরম বাতাসে এ রকম ক্ষতির সাথে অপরিচিত কৃষক বর্তমানে দিশেহারা।
রাজী গ্রামের কৃষক আতাউর বলেন, আর ১০-১৫ দিন পরে ধান কাটার কথা ছিল। কিন্তু গরম বাতাসে ধান সব নষ্ট হয়ে গেছে । উত্তর রাজী গ্রামের বুদু মিয়া জমিতে দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১৪ কাটা জমিতে ধান লাগাইছিলাম, কিন্তু রোববাবের গরম বাতাস আমার সব শেষ করে দিছে। এখন ধান কাটার আর ইচ্ছে নাই।
কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলায় ২৫ হাজার হেক্টর বোরো জমি আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি সর্বমোট ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানতে চেয়েছেন। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হবে।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘আমি কৃষি বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা হাতে পেলে সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’