অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের অভয়নগর উপজেলার  প্রাণ কেন্দ্র নওয়াপাড়া। আর ছোট্ট একটি উপজেলার ছোট্ট এ শহরটি এখন রীতিমত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার একটি ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে স্থল- নৌ ও সড়ক পথের অসাধারণ মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা নদী বন্দরকে কেন্দ্র করে।

নওয়াপাড়া নদীবন্দর এলাকায় প্রতিনিয়ত জাহাজ বা কার্গোতে দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন প্রকার মালামাল আনা-নেয়া করা হয়। ভৈরব নদের দুুই তীরে শত শত জাহাজ পণ্য খালাসের অপেক্ষায় থাকে প্রতিদিনই। সারি সারি বাঁধা জাহাজগুলোর কোনোটিতে কয়লা, কোনোটিতে সার, কোনোটিতে গম। বিরাট এই ব্যবসাযজ্ঞ হচ্ছে যশোরের ছোট্ট একটি উপজেলা শহর নওয়াপাড়াকে ঘিরে।
 
ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক  প্রসারে ২০০৪ সালের মে মাসে নওয়াপাড়াকে নদী বন্দর ঘোষণা করে গেজেট পাশ করে সরকার। গেজেটে তিনটি দিক উল্লেখ করে মহাকাল শ্মশানঘাট থেকে ভাটপাড়া ফেরিঘাট পর্যন্ত নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সীমানা তফসিল ঘোষণা করা হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় উত্তর ও দক্ষিণ সীমানার মধ্যে  প্রবাহিত ভৈরব নদীর উভয় পাড়ে সাধারণ ভরাকাটাল জোয়ারে প্লাবিত সর্বোচ্চ জলসীমা হতে স্থলভাগের দিকে ৫০ গজ পর্যন্ত বিস্তিৃত। সে অনুযায়ী নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সীমানায় অসংখ্য সীমানা পোলার স্থাপন করে বন্দর এলাকা চিহ্নিত করে বিআইডব্লিউটিএ।

কিন্তু কতিপয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, স্থানীয়  প্রভাবশালি মহল ও স্বার্থান্বেষী দখলবাজদের কারণে ভৈরব নদের স্থলভাগের সীমানার প্রায় অর্ধেকটা দখল হয়ে গেছে। আর এ দখলবাজদের কারণে বিআউডব্লিউটিএ কর্তৃক নওয়াপাড়া নদী বন্দরের স্থলভাগে স্থাপিত সীমানা পিলার গুলোর কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, বিআইডব্লিউটিএ এর নওয়াপাড়া নদী বন্দরে দায়িত্বরত কতিপয় কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকান্ড, উদাসিনতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও নওয়াপাড়া নদী বন্দরে সদ্য যোগদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম দাবি করেছেন তিনি যোগদান করেই নওয়াপাড়া নদী বন্দরের সীমানা জটিলতা নিরসন কল্পে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে তিনি সীমানা পিলার চেয়েছেন। সেই সাথে সঠিক জরিপের মাধ্যমে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের মূল সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কাজ শুরু করবেন বলে দাবি করেছেন।

এদিকে সীমানা পিলার না থাকায় নওয়াপাড়ায় বিআইডব্লিউটিএ এর লাইসেন্স প্রদানকৃত ঘাটের জায়গা নিয়ে জটিলতা বেড়েই চলেছে। একের পর এক ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। বিআইডব্লিউটিএ এর লাইসেন্সকৃত একটি ঘাটের জায়গা নিয়ে নওয়াপাড়ায় দু’টি গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বুধবার বিতর্কিত ওই স্থানে একটি পক্ষ দেয়াল তুলতে গেলে ঘটনা আরও জটিল আকার ধারন করে।

ঘটনা জেনে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সীমানা জটিলতা নিরসন হওয়ার আগে ওই স্থানে দেয়াল না তুলতে মৌখিকভাবে নিষেধ করেছেন বলে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

জানাগেছে, নওয়াপাড়া নদী বন্দরের গুয়াখোলা মৌজায় ৪ হাজার ২শ’ বর্গফুট বা ১০ শতাংশ তীরভুমি ও ২৮ বর্গ মিটার বাশের জেটিসহ ঘাট বিআইডব্লিউটিএ এর নিকট থেকে ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে পাঁচ বছরের জন্য লাইসেন্স নেয় মেসার্স কণা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্স নেয়ার পর থেকে  প্রতিষ্ঠানটি ঘাটটিতে ব্যবসা চালিয়ে আসছিলো।

সম্প্রতি নদী তীরবর্তী ওই জমির সাথে সংশ্লিষ্ঠ মোকছেদুল গং উক্ত জমির মালিকানা দাবি করে ওই স্থানে প্রাচীর নির্মান করতে গেলেই বাঁধে বিপত্তি। তাদের দাবি উক্ত জমি তাদের নিজস্ব মালিকানা সম্পত্তি। তারা অভিযোগ করেন, নদী তীরবর্তী অনেক জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণ হলেও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ তাদের বাঁধা দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে তারা বিআইডব্লিউিটিএ এর কর্মকান্ডে প্রশ্ন তুলেছেন।

এদিকে মেসার্স কনা এন্টারপ্রাইজের দাবি তারা সরকারকে রীতিমত লাইসেন্স ফি দিয়ে ঘাটের লাইসেন্স নিয়েছে। কারও মালিকানা জমি হলে বিআইডব্লিউটিএ এর সাথে তাদের বুঝতে হবে।

এ ব্যাপারে নওয়াপাড়া নদী বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সীমানা পিলার না থাকায় এমন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে নদী বন্দরের গেজেট অনুযায়ী বন্দরের জায়গাই লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। ওটা কারও ব্যক্তি মালিকানার জায়গা হতে পাওে না। আমি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সীমানা পিলার চেয়ে চিঠি লিখেছি। সীমানা পিলার পেলে নতুনভাবে জরিপ চালিয়ে মেপে সীমানা নির্ধারন করলে জটিলতার অবসান হবে।