ক্রীড়া ডেস্ক : কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের এক ফাইনালে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানে আর্জেন্টিনার জয়ের নায়ক গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার তিনটি শট ঠেকিয়ে দেন তিনি। সে সঙ্গে ৩-২ গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে যায় গেলো লিওনেল মেসির দল।
ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। প্রথম দিকেই সুযোগ তৈরি করা আর্জেন্টিনা প্রথম গোল পায় সপ্তম মিনিটে। এসময় গোলন করেন লাউতারো মার্টিনেজ। ডানপ্রান্তে পেনাল্টি অঞ্চলে বল পেয়ে যান মেসি।
অসাধারণ দক্ষতায় কলম্বিয়া ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে এর পর বামপ্রান্তে থাকা মার্টিনেজকে পাস দিলে তিনি সহজেই জাল কাঁপান। যা ছিল মেসির পঞ্চম অ্যাসিস্ট। এর দুই মিনিট বাদে কলম্বিয়াও গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। সেটি সেভ করেন আর্জেন্টাইন গোল কিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে জমে উঠে ম্যাচ। দুই প্রান্তেই রক্ষণের উপর দিয়ে বয়ে যায় ঝড়। ঝাপটা বেশি যায় এগিয়ে থাকা আর্জেন্টিনার উপর দিয়েই। ৩৮তম মিনিটে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কলম্বিয়ার দুটি চেষ্টা ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।
ডি বক্সের বাইরে থেকে উইলমার বারিওসের বুলেট গতির শট লো সোলসোর গায়ে লেগে দিক পাল্টে পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। জুভেন্টাস উইঙ্গার কুয়াদরাদোর কর্নারে ইয়েরি মিনার ক্রস ব্যর্থ হয় ক্রসবারে লেগে।
৪৪তম মিনিটে আবার সুযোগ নষ্ট হয় আর্জেন্টিনার। মেসির কর্নারে লাফিয়ে গোলরক্ষক বরাবর হেড করেন গনসালেস। বল ধরতে গিয়ে তালগোল পাকান দাভিদ অসপিনা। তার ভাগ্য ভালো ক্রসবারের উপর দিয়ে বল যায় বাইরে।
বিরতির পরই জমে উঠে খেলা। ৬১ মিনিটে অবিশ্বাস্য এক গোলে সমতা ফেরায় কলম্বিয়া। দুরূহ কোণ থেকে ডান পায়ের শটে জাল কাঁপান লুইস দিয়াজ। এর আগে অবশ্য ফাউলের শিকার হন মেসি। তাতে পা থেকে রক্ত ঝরতে থাকলেও আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন অদম্যভাবে।
৭৩তম মার্টিনেজের অবিশ্বাস্য মিসে এগিয়ে যেতে পারেনি দলটি। গোল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে ডি মারিয়াকে বাধা দিতে চেয়েছিলেন ওসপিনা। বলের নাগাল পাননি কলম্বিয়া গোলরক্ষক। নিজে শট না নিয়ে মারিয়া খুঁজে নেন মার্টিনেজকে। গোললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বারিওস বরাবর শট নেন তরুণ ফরোয়ার্ড। ফিরতি বলে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ডি মারিয়াও।
৮১তম মিনিটে ডি মারিয়ার পাস ডি বক্সে পেয়ে ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে শট নেন মেসি। কাছের পোস্টে লেগে ফিরে তার শট। একটুর জন্য ফিরতি বলের নাগাল পাননি লাউতারো মার্টিনেজ।
টাইব্রেকারে কলম্বিয়ার হয়ে প্রথম শটে গোল করেন কুয়াদ্রাদো। আর আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শট নেন মেসি। ক্ষুদে জাদুকরের দুর্দান্ত শটে গোল তখন ১-১।
কলম্বিয়ার দ্বিতীয় শট নিতে আসেন ডেভিনসন সানচেজ। বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে সানজের শট ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজ। গোল হলো ১-১। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় শট নেন রদ্রিগো ডি’পল। বারের ওপর দিয়ে মেরে দেন তিনি। গোল সংখ্যা তখন ১-১।
কলম্বিয়ার তৃতীয় শট নেন ইয়েরি মিনা। আবারও ঝাঁপিয়ে পড়ে মিনার শট ফিরিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। গোল হলো না। তখনও ১-১ সমতা। আর্জেন্টিনা তৃতীয় শট নিলেন লিয়ান্দ্রো পেরেডেস। ডেভিড ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ফেরাতে পারলেন না। এবার আর্জেন্টিনা এগিয়ে গেল ১-২ গোলে।
কলম্বিয়ার চতুর্থ শট নিতে আসেন মিগুয়েল বোরজা। এটি ঠেকাতে পারলেন না মার্টিনেজ। গোল ২-২। আর্জেন্টিনা চতুর্থ শট নেন লাউতারো মার্টিনেজ, এটিও গোল হয়ে গেলো। ওসপিনা ঝাঁপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি। ২-৩।
এবার নিজেদের শেষ শট নিতে আসেন কলম্বিয়ার এডউইন করডোনা। তার দুর্বল শটটিও ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন মার্টিনেজ। শট ঠেকিয়েই জয়ের আনন্দে দৌড় দিলেন মার্টিনেজ।
আগামী১১ জুলাই রোববার ভোর ৬টায় শিরোপা লড়াইয়ে মারাকানায় মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।