নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন
12, July, 2021, 12:03:57:AM
স্টাফ রিপোর্টার : বরেণ্য কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’র উদ্যোগে সিলেট নগরীর হযরত শাহজালাল (র.) মাজার সংলগ্ন মরহুমের সমাধিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া মাহফিল এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সিলেটের বিভিন্ন পয়েন্টে দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়া সিলেট নগরীর হোটেল স্টার প্যাসিফিকের বলরুমে মরহুমের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন স্মরণে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ১০ জুলাই বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় ‘স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’র আজীবন সদস্য ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন পরিষদের সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সচিব ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ এহছানে এলাহী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব শামসুল ইসলাম।
আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খলিলুর রহমান, স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের নির্বাহী সদস্য ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সি.এম তোয়াফেল সামি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দীন খান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এ.টি.এম শোয়েব, স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের সহসভাপতি মাহসুন নোমান রশিদ চৌধুরী প্রমূখ।
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া ভার্চুয়াল স্মরণ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও আজীবন সদস্য ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ।
এদিকে উক্ত অনুষ্ঠানে মরহুম স্পিকারের ৯৩তম জন্মজয়ন্তীতে স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে তাঁর কর্মজীবনের উপর প্রকাশিত স্মরণিকার ভার্চুয়ালি মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহধন্য। জাতির পিতার সাথে তাঁর অনেক স্মৃতি রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে চমৎকার ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিলেন। আধুনিক জাতীয় সংসদ বিনির্মাণে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তিনি উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে বিশাল অবদান রেখেছেন। জাতিসংঘের ৪১তম অধিবেশনে তিনি Right to Development এর দু’টি রেজুলেশন পাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নারকীয় হত্যাকান্ডের বিভীষিকাময় মুহুর্তে তিনি জার্মানিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিজ আশ্রয়ে নিরাপত্তা দিয়ে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাদেরকে রাজনৈতিক আশ্রয়ে দিল্লিতে থাকার ক্ষেত্রেও তিনি রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাঁর অবদান জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ কূটনীতিক। তাঁর দূরদর্শী কূটনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো। তাঁর সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। আমরা স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ গঠন করেছি তাঁর কর্মময় জীবনকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে। এই পরিষদের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাবৃত্তি চালুসহ বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যেতে চাই।’
বক্তরা বলেন, মরহুম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। দেশ গঠনে তাঁর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তিনিই সিলেটের উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেছিলেন। তাঁর বিভিন্ন উন্নয়নের অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য বক্তারা বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তাঁর নামে সিলেট রেলস্টেশনের নামকরণ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হলরুমের নামকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মারক বক্তৃতা চালুকরণ, স্বাধীনতা পুরষ্কার দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বক্তারা মরহুম স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।