সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: দীর্ঘ ১৫ বছর পর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হচ্ছে সুনামগঞ্জের ছাতকের সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুর। দীর্ঘ ৫০ বছর পর দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলাবাসীর স্বপ্ন পুরণ হতে চলছে। এ বছরের ডিসেম্বর মাসেই উদ্বোধন হবে ছাতকের সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতু।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। পরক্ষণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আর্থিক সংকট দেখা দেয়ায় সেতুর নির্মান কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সুরমা নদীর পশ্চিম পাড়ে দোয়ারাবাজার উপজেলাবাসী সরসরি সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এই সেতুর নির্মান কাজ শেষ হওয়ায় দোয়ারবাজারবাসীর মাঝে আনন্দের বন্যা বইছে। তারা সহজেই শিল্পনগরী ছাতক হয়ে সিলেট সুনামগঞ্জে স্থলপথে আসা যাওয়া করতে পারবে। ১৫ বছর আগে নির্মাণ শুরু হওয়া সেতুটি সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বরে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম।
এ সেতু নির্মাণের মধ্যদিয়ে ছাতক-দোয়ারাবাজারবাসীর যুগান্তকারী যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, আর্থসামাজিক অবস্থাসহ সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে দুই পাড়ের মানুষের সার্বিক জীবনমানের উন্নতি হবে। দুই উপজেলাবাসীর মাঝে সেতু বন্ধন তৈরী হবে।
তৎকালীন সরকার ২০০৬ সালের ২৩ আগস্ট সুরমা নদীর উপর সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জঠিলতা ও অর্থের অভাব দেখা দেয়ায় সেতু নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ২০০৭ সালে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই উপজেলার মানুষের সার্বিক উন্নতির কথা বিবেচনাকরে ২০১৬ সালে অসম্পূর্ণ সেতুর কাজ শেষ করতে ১১৩ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। পরবর্তীতে আরও ২৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৪০ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে। সময় মতো প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় দেওয়ায় জনজেবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। মুল সেতুর কাজ শেষ হলেও বাইপাস সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বোধন করা যাচ্ছে না।
সওজ বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সেতুর বাইপাসের কাজসহ সেতুর শতভাগ কাজ শেষ করে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। সেতুটি উদ্বোধন করা হলে ছাতক দোয়ারাবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সার্বিকভাবে উন্নয়ন হবে এবং দোয়ারাবাজারে উৎপাদিত কৃষিজাত পন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে অধিক দামে বিক্রি করে লাভবান হবে কৃষক। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বাশতলা, ঝুমগাওসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাবে এবং অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
দোয়ারাবাজারের গণমাধ্যমকর্মী মোতালেব ভুইয়া জানান, আমরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করতাম। ছাতকের সুরমা নদীতে সেতুটি চালু হলে আমাদের সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। তবে দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সম্মুখে আরও একটি সেতু নির্মান করা সময়ের দাবী। সেতুটি নির্মিত হওয়ায় আমরা দোয়ারাবাজারবাসী খুবই খুশি।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী নজরুল ইসলাম জানান, আমরা ইতোমধ্যে সেতুর ৯৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ হলে এ বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুটি সর্ব সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি। তিনি আরও বলেন, এ সেতু উদ্বোধন হলে পিছিয়ে পড়া দোয়ারবাজারবাসীর জীবনমান বৃদ্ধি পাবে।